১২:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

দীর্ঘ পাঁচ বছর আইনি লড়াই শেষে মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন বুড়িচংয়ের কবির হোসেন

  • প্রকাশের সময় : ১২:০৩:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
  • 55

মোঃ শাহজাহান বাশার, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার

দীর্ঘ পাঁচ বছর আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে মিথ্যা মামলার শেকল থেকে মুক্তি পেলেন কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল ইউনিয়নের বাকশিমুল গ্রামের বাসিন্দা মো. কবির হোসেন।

গত ৬ অক্টোবর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২৬ এর সম্মানিত বিচারক আওলাদ হোসেন মোহাম্মদ জুনায়েদ এক ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন। আদালত রায়ে কবির হোসেনের বিরুদ্ধে দায়ের করা জিআর মামলা নং ১০৪৭/২০ (সাল ২০২০) স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করে তাকে অব্যাহতি প্রদান করেন।

রায়ে উল্লেখ করা হয়, মামলাটিতে ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠন করা হলেও দীর্ঘ চার বছরে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির করতে পারেনি। অভিযোগ গঠনের পর থেকে মোট ১৩টি সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করা হলেও প্রত্যেকবারই সাক্ষীরা অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে মামলার অগ্রগতি সম্ভব হয়নি।

আদালত আরও উল্লেখ করেন, ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৩৩৯ (গ)(১) অনুযায়ী একটি মামলার বিচারিক সময়সীমা সর্বোচ্চ ১৮০ কার্যদিবস। তাছাড়া বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের স্মারক নং ১৭০৫৪(১৬), তারিখ: ৩০ আগস্ট ২০১৫ অনুসারে তিন বছরের অধিক পুরোনো মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির নির্দেশনা রয়েছে।

রায়ে বলা হয়, “রাষ্ট্রপক্ষের ব্যর্থতা ও সাক্ষ্যগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার কারণে মামলার আর কোনো অগ্রগতি বা ন্যায়বিচারের সম্ভাবনা নেই। তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হলো এবং আসামি মো. কবির হোসেনকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।”

এছাড়া আদালত নির্দেশ দেন, আসামির নামে পূর্বে জারি করা কোনো পরোয়ানা বা প্রসেস থাকলে তা অবিলম্বে রিকল (প্রত্যাহার) করতে হবে।

রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় কবির হোসেন বলেন,

“আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করা এবং মানসম্মান নষ্ট করার উদ্দেশ্যে কিছু কুচক্রী ব্যক্তি মিথ্যা মামলাটি সাজিয়েছিল। আমি পরিবারসহ ভয় ও অপমানের মধ্যে দিন কাটিয়েছি। তবে দেরিতে হলেও বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি।”

এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মামলার সময়কালীন দীর্ঘ হয়রানির ফলে কবির হোসেন ও তার পরিবার চরম মানসিক ও সামাজিক সংকটে পড়েছিলেন। তবে আদালতের রায় ঘোষণার পর এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তির পরিবেশ বিরাজ করছে।

মানবাধিকারকর্মী ও স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, “এ ধরনের মিথ্যা মামলার কারণে নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। আদালতের এই রায় সমাজে ন্যায়বিচারের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

বুড়িচংয়ের সাধারণ মানুষ আশা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতে যেন কেউ ব্যক্তিগত শত্রুতা বা প্রতিহিংসার কারণে নির্দোষ কাউকে মিথ্যা মামলায় জড়াতে না পারে এবং আইনের শাসন সবার জন্য সমানভাবে কার্যকর হয়।

জনপ্রিয়

২০১৮ সালে সংসদে যাওয়া দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিএনপির মশাল মিছিল

দীর্ঘ পাঁচ বছর আইনি লড়াই শেষে মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন বুড়িচংয়ের কবির হোসেন

প্রকাশের সময় : ১২:০৩:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫

মোঃ শাহজাহান বাশার, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার

দীর্ঘ পাঁচ বছর আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে মিথ্যা মামলার শেকল থেকে মুক্তি পেলেন কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল ইউনিয়নের বাকশিমুল গ্রামের বাসিন্দা মো. কবির হোসেন।

গত ৬ অক্টোবর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২৬ এর সম্মানিত বিচারক আওলাদ হোসেন মোহাম্মদ জুনায়েদ এক ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন। আদালত রায়ে কবির হোসেনের বিরুদ্ধে দায়ের করা জিআর মামলা নং ১০৪৭/২০ (সাল ২০২০) স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করে তাকে অব্যাহতি প্রদান করেন।

রায়ে উল্লেখ করা হয়, মামলাটিতে ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠন করা হলেও দীর্ঘ চার বছরে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির করতে পারেনি। অভিযোগ গঠনের পর থেকে মোট ১৩টি সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করা হলেও প্রত্যেকবারই সাক্ষীরা অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে মামলার অগ্রগতি সম্ভব হয়নি।

আদালত আরও উল্লেখ করেন, ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৩৩৯ (গ)(১) অনুযায়ী একটি মামলার বিচারিক সময়সীমা সর্বোচ্চ ১৮০ কার্যদিবস। তাছাড়া বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের স্মারক নং ১৭০৫৪(১৬), তারিখ: ৩০ আগস্ট ২০১৫ অনুসারে তিন বছরের অধিক পুরোনো মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির নির্দেশনা রয়েছে।

রায়ে বলা হয়, “রাষ্ট্রপক্ষের ব্যর্থতা ও সাক্ষ্যগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার কারণে মামলার আর কোনো অগ্রগতি বা ন্যায়বিচারের সম্ভাবনা নেই। তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হলো এবং আসামি মো. কবির হোসেনকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।”

এছাড়া আদালত নির্দেশ দেন, আসামির নামে পূর্বে জারি করা কোনো পরোয়ানা বা প্রসেস থাকলে তা অবিলম্বে রিকল (প্রত্যাহার) করতে হবে।

রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় কবির হোসেন বলেন,

“আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করা এবং মানসম্মান নষ্ট করার উদ্দেশ্যে কিছু কুচক্রী ব্যক্তি মিথ্যা মামলাটি সাজিয়েছিল। আমি পরিবারসহ ভয় ও অপমানের মধ্যে দিন কাটিয়েছি। তবে দেরিতে হলেও বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি।”

এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মামলার সময়কালীন দীর্ঘ হয়রানির ফলে কবির হোসেন ও তার পরিবার চরম মানসিক ও সামাজিক সংকটে পড়েছিলেন। তবে আদালতের রায় ঘোষণার পর এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তির পরিবেশ বিরাজ করছে।

মানবাধিকারকর্মী ও স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, “এ ধরনের মিথ্যা মামলার কারণে নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। আদালতের এই রায় সমাজে ন্যায়বিচারের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

বুড়িচংয়ের সাধারণ মানুষ আশা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতে যেন কেউ ব্যক্তিগত শত্রুতা বা প্রতিহিংসার কারণে নির্দোষ কাউকে মিথ্যা মামলায় জড়াতে না পারে এবং আইনের শাসন সবার জন্য সমানভাবে কার্যকর হয়।