১১:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ঝগড়া বিবাদ ও শত্রুতার কারণ স্বার্থপরতা

  • প্রকাশের সময় : ০৬:৩৪:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
  • 56

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির

স্বার্থপরতা হলো- শুধুমাত্র নিজের স্বার্থ নিয়ে ভাবা, সব ক্ষেত্রে নিজের স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া; অন্যের স্বার্থকে উপেক্ষা করা, অগ্রাহ্য করা। সাধারণত কথাবার্তা, আচার-আচরণ, চলাফেরা, লেনদেন, উপদেশ-পরামর্শ ও নিত্যনৈমিত্তিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে স্বার্থপরতার প্রতিচ্ছবি ফোটে ওঠে। নিজ স্বার্থের প্রতি টান বা আকর্ষণ সবারই আছে, থাকবে।

এটা দোষের কিছু না। সহজাত মানবিক প্রবৃত্তি। তবে এই আকর্ষণ যখন সীমা অতিক্রম করে তখন সেটা স্বার্থপরতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, ‘স্বার্থ যখন স্বার্থপরতার সাধারণ সীমা ছাপিয়ে ওঠে, তখনই আমরা তাকে স্বার্থপরতা বলি।’ (প্রবন্ধ: নিন্দা-তত্ত্ব) স্বার্থপরতা সব দ্বন্দ্ব ও বিবাদের প্রধান কারণ। এর কারণে পারস্পরিক আস্থা, বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা বিনষ্ট হয়ে যায়।

যাদের স্বার্থ হাসিলের তৎপরতা সীমা অতিক্রম করে তাঁরাই সমাজে স্বার্থপর হিসেবে পরিচিত। স্বার্থপররা অন্যের লাভ ক্ষতির চিন্তা করে না। নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্যের ক্ষতি করতে দ্বিধাবোধ করে না। তাঁরা স্বার্থ হাসিলের জন্য মনুষ্যত্ব, বিচারবোধ, নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। ফলশ্রুতিতে পারস্পরিক সম্পর্কে ফাটল ধরে। সমাজে মানবতার বিপর্যয় ঘটে। স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে হত্যা, স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে হত্যা, সন্তান কর্তৃক পিতাকে হত্যা, ভাই কর্তৃক আপন ভাইকে হত্যার মতো অপকর্ম সংঘটিত হয়ে থাকে। স্বার্থের কারণেই মানুষ দল-মত-পথ এমন কি ধর্ম পর্যন্ত বিসর্জন দিতে পারে। ইতিহাসে এমন অসংখ্য নজির রয়েছে।

স্বার্থপররা শুধু নিজের সুবিধাটা-ই বুঝে, নিজের সুবিধাটাই খুঁজে। অন্যের সুবিধাটা তারা তুচ্ছ মনে করে, অগ্রাহ্য করে। অন্যের সুসময়ে অন্যের প্রতি তাদের আন্তরিকতা বেড়ে যায়। আর অন্যের দুঃসময়ে বেড়ে যায়, তাদের ব্যস্ততা। তখন তাদের কাছে পাওয়া যায় না। অন্যের বিপদের সময় উন্মোচিত হয়ে যায় তাদের বিভৎস মুখোশ। মধ্যযুগে শাসনকার্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নিজস্বার্থকে সর্বদা জনস্বার্থের উপর প্রাধান্য দিতেন। ফলে আমজনতাকে বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়তে হতো। এ ক্ষতির গ্লানি বহন করতে হত বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ। মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতা এর নির্মম দৃষ্টান্ত। তিনি জনস্বার্থকে অগ্রাহ্য করে নিজস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে ভারতবর্ষকে প্রায় ২০০ বছর পরাধীন থাকতে হয়েছে। এর পরিণতি শুধু আমজনতাই ভোগ করছে বিষয়টা এমন নয়; বরং তিনি ও তার বংশধররাও এর চেয়ে নির্মম পরিণতির শিকার হয়েছেন। কাজেই নিজস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বিশ্বাসঘাতকতার সময় সবার মীর জাফরের পরিণতিটা মনে রাখা দরকার। বর্তমানে নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলের নেতারা নিঃস্বার্থভাবে জনসেবার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রকৃতপক্ষে তারা কেউই নিঃস্বার্থভাবে জনসেবা করেন না। বরং জনসেবার মুখোশ পরে তারা জনগণকে শোষণ করেন। ক্ষমতাসীন থাকাকালে তাদের অঢেল অর্থ-সম্পদ বৃদ্ধিই প্রমাণ করে তারা কত স্বার্থপর। তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে স্বার্থপরতার সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
জীবনের চলার পথে কত মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়, মেলামেশা হয়। তাদের মধ্যে কতিপয় মানুষের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বেড়িয়ে আসে নির্লজ্জ স্বার্থপরতার দুর্বিষহ দুর্গন্ধ। তাদের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রাখা তখন দায় হয়ে পড়ে। সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে তাদের সঙ্গে চলে অনিচ্ছাকৃত ওঠাবসা। সময়ের আবর্তে কোনো একদিন হয়তো চলে যেতে হবে।

চিন্তা ভাবনায় থাকবে নতুন বিষয়। প্রসঙ্গক্রমে তাদের আলোচনা চলে আসলে স্বার্থ হাসিলের জন্য তাদের নিত্যদিনের কূটকৌশলগুলো ভেসে উঠবে স্মৃতির পাতায়। চেষ্টা করা হবে তাদের ভুলে যাওয়ার জন্য কিন্তু প্রাসঙ্গিক নানা ঘটনার আবর্তে মনে পড়ে যাবে, তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া দুর্বিষহ সেই স্মৃতিগুলো। সুন্দর পৃথিবীর ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে। অন্যরা ভোগ করবে নিজের অর্জিত সম্পদ। সেদিন স্বার্থ হাসিলের কূটকৌশল কোনো কাজে আসবে না। সুতরাং নিজ স্বার্থের পাশাপাশি অন্যের স্বার্থটাও দেখা দরকার, সমাজের সুন্দর, কাজের ভালোটা আগে করা দরকার। তাহলেই নিজেরটার পাশাপাশি অন্যেরটা ভাবা যাবে , স্বার্থ থেকে অপরের ভালটা ভাবতে ভাল লাগবে। নিজের এবং অপরের ভাল করা, কল্যাণ কামনা করা হয়ে উঠুক আমাদের কামনা।এই প্রত্যাশা করি।

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, সাংবাদিক,ধর্ম ও সমাজ সচেতন লেখক, সংগঠক ও সিনিয়র সহ-সভাপতি বুড়িচং প্রেস ক্লাব, কুমিল্লা

জনপ্রিয়

উখিয়ায় আমির হোসেনের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখল ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে

ঝগড়া বিবাদ ও শত্রুতার কারণ স্বার্থপরতা

প্রকাশের সময় : ০৬:৩৪:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির

স্বার্থপরতা হলো- শুধুমাত্র নিজের স্বার্থ নিয়ে ভাবা, সব ক্ষেত্রে নিজের স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া; অন্যের স্বার্থকে উপেক্ষা করা, অগ্রাহ্য করা। সাধারণত কথাবার্তা, আচার-আচরণ, চলাফেরা, লেনদেন, উপদেশ-পরামর্শ ও নিত্যনৈমিত্তিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে স্বার্থপরতার প্রতিচ্ছবি ফোটে ওঠে। নিজ স্বার্থের প্রতি টান বা আকর্ষণ সবারই আছে, থাকবে।

এটা দোষের কিছু না। সহজাত মানবিক প্রবৃত্তি। তবে এই আকর্ষণ যখন সীমা অতিক্রম করে তখন সেটা স্বার্থপরতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, ‘স্বার্থ যখন স্বার্থপরতার সাধারণ সীমা ছাপিয়ে ওঠে, তখনই আমরা তাকে স্বার্থপরতা বলি।’ (প্রবন্ধ: নিন্দা-তত্ত্ব) স্বার্থপরতা সব দ্বন্দ্ব ও বিবাদের প্রধান কারণ। এর কারণে পারস্পরিক আস্থা, বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা বিনষ্ট হয়ে যায়।

যাদের স্বার্থ হাসিলের তৎপরতা সীমা অতিক্রম করে তাঁরাই সমাজে স্বার্থপর হিসেবে পরিচিত। স্বার্থপররা অন্যের লাভ ক্ষতির চিন্তা করে না। নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্যের ক্ষতি করতে দ্বিধাবোধ করে না। তাঁরা স্বার্থ হাসিলের জন্য মনুষ্যত্ব, বিচারবোধ, নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। ফলশ্রুতিতে পারস্পরিক সম্পর্কে ফাটল ধরে। সমাজে মানবতার বিপর্যয় ঘটে। স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে হত্যা, স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে হত্যা, সন্তান কর্তৃক পিতাকে হত্যা, ভাই কর্তৃক আপন ভাইকে হত্যার মতো অপকর্ম সংঘটিত হয়ে থাকে। স্বার্থের কারণেই মানুষ দল-মত-পথ এমন কি ধর্ম পর্যন্ত বিসর্জন দিতে পারে। ইতিহাসে এমন অসংখ্য নজির রয়েছে।

স্বার্থপররা শুধু নিজের সুবিধাটা-ই বুঝে, নিজের সুবিধাটাই খুঁজে। অন্যের সুবিধাটা তারা তুচ্ছ মনে করে, অগ্রাহ্য করে। অন্যের সুসময়ে অন্যের প্রতি তাদের আন্তরিকতা বেড়ে যায়। আর অন্যের দুঃসময়ে বেড়ে যায়, তাদের ব্যস্ততা। তখন তাদের কাছে পাওয়া যায় না। অন্যের বিপদের সময় উন্মোচিত হয়ে যায় তাদের বিভৎস মুখোশ। মধ্যযুগে শাসনকার্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নিজস্বার্থকে সর্বদা জনস্বার্থের উপর প্রাধান্য দিতেন। ফলে আমজনতাকে বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়তে হতো। এ ক্ষতির গ্লানি বহন করতে হত বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ। মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতা এর নির্মম দৃষ্টান্ত। তিনি জনস্বার্থকে অগ্রাহ্য করে নিজস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে ভারতবর্ষকে প্রায় ২০০ বছর পরাধীন থাকতে হয়েছে। এর পরিণতি শুধু আমজনতাই ভোগ করছে বিষয়টা এমন নয়; বরং তিনি ও তার বংশধররাও এর চেয়ে নির্মম পরিণতির শিকার হয়েছেন। কাজেই নিজস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বিশ্বাসঘাতকতার সময় সবার মীর জাফরের পরিণতিটা মনে রাখা দরকার। বর্তমানে নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলের নেতারা নিঃস্বার্থভাবে জনসেবার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রকৃতপক্ষে তারা কেউই নিঃস্বার্থভাবে জনসেবা করেন না। বরং জনসেবার মুখোশ পরে তারা জনগণকে শোষণ করেন। ক্ষমতাসীন থাকাকালে তাদের অঢেল অর্থ-সম্পদ বৃদ্ধিই প্রমাণ করে তারা কত স্বার্থপর। তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে স্বার্থপরতার সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
জীবনের চলার পথে কত মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়, মেলামেশা হয়। তাদের মধ্যে কতিপয় মানুষের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বেড়িয়ে আসে নির্লজ্জ স্বার্থপরতার দুর্বিষহ দুর্গন্ধ। তাদের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রাখা তখন দায় হয়ে পড়ে। সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে তাদের সঙ্গে চলে অনিচ্ছাকৃত ওঠাবসা। সময়ের আবর্তে কোনো একদিন হয়তো চলে যেতে হবে।

চিন্তা ভাবনায় থাকবে নতুন বিষয়। প্রসঙ্গক্রমে তাদের আলোচনা চলে আসলে স্বার্থ হাসিলের জন্য তাদের নিত্যদিনের কূটকৌশলগুলো ভেসে উঠবে স্মৃতির পাতায়। চেষ্টা করা হবে তাদের ভুলে যাওয়ার জন্য কিন্তু প্রাসঙ্গিক নানা ঘটনার আবর্তে মনে পড়ে যাবে, তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া দুর্বিষহ সেই স্মৃতিগুলো। সুন্দর পৃথিবীর ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে। অন্যরা ভোগ করবে নিজের অর্জিত সম্পদ। সেদিন স্বার্থ হাসিলের কূটকৌশল কোনো কাজে আসবে না। সুতরাং নিজ স্বার্থের পাশাপাশি অন্যের স্বার্থটাও দেখা দরকার, সমাজের সুন্দর, কাজের ভালোটা আগে করা দরকার। তাহলেই নিজেরটার পাশাপাশি অন্যেরটা ভাবা যাবে , স্বার্থ থেকে অপরের ভালটা ভাবতে ভাল লাগবে। নিজের এবং অপরের ভাল করা, কল্যাণ কামনা করা হয়ে উঠুক আমাদের কামনা।এই প্রত্যাশা করি।

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, সাংবাদিক,ধর্ম ও সমাজ সচেতন লেখক, সংগঠক ও সিনিয়র সহ-সভাপতি বুড়িচং প্রেস ক্লাব, কুমিল্লা