১১:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রাম লালদীঘি মাঠে বিশাল জনসভায় বৃহত্তর সুন্নী জোট নেতৃবৃন্দ কোনো মহলের ষড়যন্ত্রে জাতীয় নির্বাচন বানচাল হলে দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে

  • প্রকাশের সময় : ১১:২৯:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
  • 7

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি 

আগামী ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রীয় সংলাপে এবং জুলাই সনদে সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণের সমান সুযোগ দেয়া, দুর্নীতিবাজ কালোর টাকার মালিক ও দণ্ডিতদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা, মাজার মসজিদ খানকায় হামলায় জড়িতদের বিচার, জুলাই বিপ্লব ও পরবর্তী সময়ে সংঘটিত সব হত্যার বিচার করা এবং মবসন্ত্রাস থামানো সহ ১৩দফা দাবিতে শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকালে চট্টগ্রাম লালদীঘি ময়দানে বিশাল জনসভার আয়োজন করে বৃহত্তর সুন্নীজোট চট্টগ্রাম জেলা।

বিএসপি চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি এস এম শাহাবুদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং জনসভা প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর সভাপতি মাওলানা আবদুন্নবী আলকাদেরী, সদস্য সচিব বিএসপি চট্টগ্রাম জেলা সেক্রেটারি মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন ভূইয়া ও ইসলামিক ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর সহসভাপতি মঈন উদ্দিন চৌধুরী হালিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত জনসভায় জোটের অন্যতম শীর্ষনেতা ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান মাওলানা সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদী বলেন, দেশে কোটি তরুণ যুবক আজ বেকার।

দিন দিন বাড়ছে দারিদ্র। এই সোয়া এক বছরে সারাদেশে শত শত মিল কারখানা বন্ধ হয়ে লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়লেও সরকারের এদিকে দৃষ্টি নাই। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে কবরের লাশও নিরাপদ নয়।

কবর থেকে লাশ তুলে উল্লাস করে পুড়িয়ে ফেলার ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত অতীতেও কখনো দেখা যায়নি। দেশে যেন নব্য জাহিলিয়াত ফিরে এসেছে।

জনসভায় বৃহত্তর সুন্নীজোটের অন্যতম শীর্ষনেতা বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপির কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান পীরে তরিকত মাওলানা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপদ নয়।

গত ১৫ মাসে সারা দেশে মব সৃষ্টি করে নিরীহ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হেনস্তা, মাজারে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ বহু ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন স্থানে মসজিদে হামলা, জোর করে ইমাম খতিবদের মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া, কবর থেকে লাশ উঠিয়ে জ্বালিয়ে ফেলা এবং কবরস্থানে অগ্নিসংযোগের মতো অমানবিক ঘটনাও ঘটেছে।

এমনকি বিচারালয়ের বিচারকরাও আজ নিরাপদ নয়।

সরকার ও সেনাবাহিনী ‘মব ভায়োলেন্স বরদাশত না করার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে উদাসীনতা স্পষ্ট। তিনি বলেন সুন্নী ছাত্র জনতা কারো প্রতিপক্ষ নয়। এদেশে সুফীবাদী জনতাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। কিন্তু গায়ে পড়ে ঝগড়া বাধালে আমরা আর চুপ থাকব না।

বৃহত্তর সুন্নী জোটের অন্যতম শীর্ষনেতা বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিন বলেছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্নের বাংলাদেশ এখনো অধরাই থেকে গেল। দেশে কিছুই বদলায়নি। বরং দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন খুন সন্ত্রাস আরো বেড়েছে।

সরকারের কিছু উপদেষ্টার দলঘেঁষা পক্ষপাত মূলক আচরণ সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সরকার কারো এজেন্ডা বাস্তবায়নে অগ্রসর না সমাবেশ থেকে হয়ে জনপ্রত্যাশার আলোকে সকল পদক্ষেপ নেবে এটাই দেশবাসী দেখতে চায়।

জনসভায় ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা জয়নাল আবেদীন জুবাইর বলেন, এই সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু ১৫ মাসে দেশে বড় কোনো পরিবর্তন আসে নি। দেশে এখন গ্রেফতার বাণিজ্য, মামলা বাণিজ্য, জামিন বাণিজ্যসহ ঘুষ দুর্নীতির মচ্ছব চলছে।

সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারি ব্যর্থতা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বৃহত্তর সুন্নীজোটের এই ঐক্য ধরে রাখতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ছাড় দেওয়ার এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা স উ ম আবদুস সামাদ বলেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিতে পারে দেশবিরোধী অপশক্তি। আগামী ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচন কারো কারণে বানচাল হলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে বলে আমরা আশংকা করছি। তিনি চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সুন্নি আলেম ও সংগঠকদের বিরুদ্ধে হেনস্তা, চাপ প্রয়োগ এবং মিথ্যা মামলা হয়রানি ও ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।

বিএসপির কো-চেয়ারম্যান এডভোকেট কাজী মহসিন চৌধুরী বলেন, শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকারের ঋণ নির্ভরতা বাড়লেও বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। অর্থনৈতিক চাপ ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে সরকারের প্রতি জনআস্থা কমছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সুন্নীজোট নেতৃবৃন্দ বলেন, এই মুহূর্তে বড় প্রয়োজন জনস্বার্থে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য। কিন্তু জাতীয় জনস্বার্থ ইস্যুতে ঐক্যের চেয়ে অনৈক্য-বিভাজনই আজ প্রকট হয়ে উঠেছে। ফলে দেশবাসীর মাঝে যে শঙ্কা ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সর্বোচ্চ ছাড় দিতে হবে।

বর্তমানে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান না হলে কিংবা কোনো মহলের ষড়যন্ত্রের কারণে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বানচাল হলে জনগণকে আবারো চরম মাশুল দিতে হবে।

তখন দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে বৃহত্তর সুন্নী জোট নেতৃবৃন্দ আশংকা প্রকাশ করেন। সরকারি সংলাপে এবং জুলাই জাতীয় সনদে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের মতামত ও সই না নেওয়ায় বৃহত্তর সুন্নীজোট নেতারা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। সরকার যেন কোনো দলের দিকে ঝুঁকে পড়ে পক্ষপাতযুক্ত আচরণ না করে তাই আশা করেন সুন্নীজোট নেতৃবৃন্দ। জনসভায় ইসলামী ব্যাংক সহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে ছাঁটাইকৃত ব্যাংক কর্মীদের চাকরি অবিলম্বে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।

জনসভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এইচ এম মুজিবুল হক শাকুর। অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট প্রেসিডিয়াম সদস্য পীরে তরিকত আল্লামা সৈয়দ মছিহুদ্দৌলা, এডভোকেট আবু নাছের তালুকদার, মাওলানা আবু সুফিয়ান আবেদী আলকাদেরী, অধ্যক্ষ মাওলানা আহমদ হোসাইন আলকাদেরী, এম সোলায়মান ফরিদ, অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল, মাওলানা ছাদেকুর রহমান হাশেমী, মাওলানা গোলামুর রহমান আশরফ শাহ।

ইসলামিক ফ্রন্ট নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ মাওলানা এস এম ফরিদ উদ্দীন, আল্লামা কাজী জসিম উদ্দিন, মুহাম্মদ ইব্রাহীম আখতারী, বিএসপি অতিরিক্ত মহাসচিব মো. আসলাম হোসাইন, বিএসপি ভাইস চেয়ারম্যান পীরে তরিক্বত মাওলানা মুফতি খাজা বাকি বিল্লাহ আজহারী, যুগ্ম মহাসচিব মো. ইব্রাহিম মিয়া,

যুগ্ম মহাসচিব ঢালি কামরুজ্জামান হারুন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ইসলামী ফ্রন্ট সভাপতি অধ্যাপক আবদুর রহিম মুনিরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি মাওলানা ফেরদৌসুল আলম খান কাদেরী, স ম হামেদ হোসাইন, অধ্যক্ষ ছৈয়দ মাওলানা জসিম উদ্দীন তৈয়বী, স ম শহিদুল হক ফারুকী,

অধ্যাপক ছৈয়দ হাফেজ আহমদ, স ম শওকত আজিজ, চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইউনুস যুক্তিবাদী, চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন মাহমুদ, চট্টগ্রাম নগর দক্ষিণ সাধারণ সম্পাদক আলমগীর ইসলাম বঈদী, যুবসেনা কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা: সরওয়ার উদ্দিন, ছাত্রসেনা কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাহেদুল আলম, আইনবিষয়ক সম্পাদক মো. শাহ আলম অভি, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. নুরুল আনোয়ার হিরণ, মুহাম্মদ আলী হোসেন, মাস্টার খোরশেদ আলম প্রমুখ।

জনসভায় ঘোষিত ১৩ দফার দাবির মধ্যে আরো রয়েছে, নির্বাচনের আগে সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা, পার্বত্য জেলায় বিদেশি মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা, চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা, আরাকান আর্মিকে করিডোর না দেয়া,

মাজার মসজিদে হামলাকারীদের বিচার ও মাজার, খানকা, দরবার শরীফ ও ধর্মীয় নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা রক্ষা ও স্বাধীনতার ইতিহাস সংরক্ষণ করা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নির্বাচনকালীন সময়ে দল নিরপেক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা

জনপ্রিয়

চট্টগ্রাম লালদীঘি মাঠে বিশাল জনসভায় বৃহত্তর সুন্নী জোট নেতৃবৃন্দ কোনো মহলের ষড়যন্ত্রে জাতীয় নির্বাচন বানচাল হলে দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে

চট্টগ্রাম লালদীঘি মাঠে বিশাল জনসভায় বৃহত্তর সুন্নী জোট নেতৃবৃন্দ কোনো মহলের ষড়যন্ত্রে জাতীয় নির্বাচন বানচাল হলে দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে

প্রকাশের সময় : ১১:২৯:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি 

আগামী ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রীয় সংলাপে এবং জুলাই সনদে সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণের সমান সুযোগ দেয়া, দুর্নীতিবাজ কালোর টাকার মালিক ও দণ্ডিতদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা, মাজার মসজিদ খানকায় হামলায় জড়িতদের বিচার, জুলাই বিপ্লব ও পরবর্তী সময়ে সংঘটিত সব হত্যার বিচার করা এবং মবসন্ত্রাস থামানো সহ ১৩দফা দাবিতে শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকালে চট্টগ্রাম লালদীঘি ময়দানে বিশাল জনসভার আয়োজন করে বৃহত্তর সুন্নীজোট চট্টগ্রাম জেলা।

বিএসপি চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি এস এম শাহাবুদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং জনসভা প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর সভাপতি মাওলানা আবদুন্নবী আলকাদেরী, সদস্য সচিব বিএসপি চট্টগ্রাম জেলা সেক্রেটারি মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন ভূইয়া ও ইসলামিক ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর সহসভাপতি মঈন উদ্দিন চৌধুরী হালিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত জনসভায় জোটের অন্যতম শীর্ষনেতা ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান মাওলানা সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদী বলেন, দেশে কোটি তরুণ যুবক আজ বেকার।

দিন দিন বাড়ছে দারিদ্র। এই সোয়া এক বছরে সারাদেশে শত শত মিল কারখানা বন্ধ হয়ে লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়লেও সরকারের এদিকে দৃষ্টি নাই। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে কবরের লাশও নিরাপদ নয়।

কবর থেকে লাশ তুলে উল্লাস করে পুড়িয়ে ফেলার ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত অতীতেও কখনো দেখা যায়নি। দেশে যেন নব্য জাহিলিয়াত ফিরে এসেছে।

জনসভায় বৃহত্তর সুন্নীজোটের অন্যতম শীর্ষনেতা বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপির কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান পীরে তরিকত মাওলানা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপদ নয়।

গত ১৫ মাসে সারা দেশে মব সৃষ্টি করে নিরীহ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হেনস্তা, মাজারে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ বহু ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন স্থানে মসজিদে হামলা, জোর করে ইমাম খতিবদের মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া, কবর থেকে লাশ উঠিয়ে জ্বালিয়ে ফেলা এবং কবরস্থানে অগ্নিসংযোগের মতো অমানবিক ঘটনাও ঘটেছে।

এমনকি বিচারালয়ের বিচারকরাও আজ নিরাপদ নয়।

সরকার ও সেনাবাহিনী ‘মব ভায়োলেন্স বরদাশত না করার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে উদাসীনতা স্পষ্ট। তিনি বলেন সুন্নী ছাত্র জনতা কারো প্রতিপক্ষ নয়। এদেশে সুফীবাদী জনতাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। কিন্তু গায়ে পড়ে ঝগড়া বাধালে আমরা আর চুপ থাকব না।

বৃহত্তর সুন্নী জোটের অন্যতম শীর্ষনেতা বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিন বলেছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্নের বাংলাদেশ এখনো অধরাই থেকে গেল। দেশে কিছুই বদলায়নি। বরং দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন খুন সন্ত্রাস আরো বেড়েছে।

সরকারের কিছু উপদেষ্টার দলঘেঁষা পক্ষপাত মূলক আচরণ সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সরকার কারো এজেন্ডা বাস্তবায়নে অগ্রসর না সমাবেশ থেকে হয়ে জনপ্রত্যাশার আলোকে সকল পদক্ষেপ নেবে এটাই দেশবাসী দেখতে চায়।

জনসভায় ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা জয়নাল আবেদীন জুবাইর বলেন, এই সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু ১৫ মাসে দেশে বড় কোনো পরিবর্তন আসে নি। দেশে এখন গ্রেফতার বাণিজ্য, মামলা বাণিজ্য, জামিন বাণিজ্যসহ ঘুষ দুর্নীতির মচ্ছব চলছে।

সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারি ব্যর্থতা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বৃহত্তর সুন্নীজোটের এই ঐক্য ধরে রাখতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ছাড় দেওয়ার এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা স উ ম আবদুস সামাদ বলেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিতে পারে দেশবিরোধী অপশক্তি। আগামী ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচন কারো কারণে বানচাল হলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে বলে আমরা আশংকা করছি। তিনি চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সুন্নি আলেম ও সংগঠকদের বিরুদ্ধে হেনস্তা, চাপ প্রয়োগ এবং মিথ্যা মামলা হয়রানি ও ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।

বিএসপির কো-চেয়ারম্যান এডভোকেট কাজী মহসিন চৌধুরী বলেন, শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকারের ঋণ নির্ভরতা বাড়লেও বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। অর্থনৈতিক চাপ ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে সরকারের প্রতি জনআস্থা কমছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সুন্নীজোট নেতৃবৃন্দ বলেন, এই মুহূর্তে বড় প্রয়োজন জনস্বার্থে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য। কিন্তু জাতীয় জনস্বার্থ ইস্যুতে ঐক্যের চেয়ে অনৈক্য-বিভাজনই আজ প্রকট হয়ে উঠেছে। ফলে দেশবাসীর মাঝে যে শঙ্কা ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সর্বোচ্চ ছাড় দিতে হবে।

বর্তমানে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান না হলে কিংবা কোনো মহলের ষড়যন্ত্রের কারণে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বানচাল হলে জনগণকে আবারো চরম মাশুল দিতে হবে।

তখন দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে বৃহত্তর সুন্নী জোট নেতৃবৃন্দ আশংকা প্রকাশ করেন। সরকারি সংলাপে এবং জুলাই জাতীয় সনদে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের মতামত ও সই না নেওয়ায় বৃহত্তর সুন্নীজোট নেতারা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। সরকার যেন কোনো দলের দিকে ঝুঁকে পড়ে পক্ষপাতযুক্ত আচরণ না করে তাই আশা করেন সুন্নীজোট নেতৃবৃন্দ। জনসভায় ইসলামী ব্যাংক সহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে ছাঁটাইকৃত ব্যাংক কর্মীদের চাকরি অবিলম্বে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।

জনসভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এইচ এম মুজিবুল হক শাকুর। অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট প্রেসিডিয়াম সদস্য পীরে তরিকত আল্লামা সৈয়দ মছিহুদ্দৌলা, এডভোকেট আবু নাছের তালুকদার, মাওলানা আবু সুফিয়ান আবেদী আলকাদেরী, অধ্যক্ষ মাওলানা আহমদ হোসাইন আলকাদেরী, এম সোলায়মান ফরিদ, অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল, মাওলানা ছাদেকুর রহমান হাশেমী, মাওলানা গোলামুর রহমান আশরফ শাহ।

ইসলামিক ফ্রন্ট নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ মাওলানা এস এম ফরিদ উদ্দীন, আল্লামা কাজী জসিম উদ্দিন, মুহাম্মদ ইব্রাহীম আখতারী, বিএসপি অতিরিক্ত মহাসচিব মো. আসলাম হোসাইন, বিএসপি ভাইস চেয়ারম্যান পীরে তরিক্বত মাওলানা মুফতি খাজা বাকি বিল্লাহ আজহারী, যুগ্ম মহাসচিব মো. ইব্রাহিম মিয়া,

যুগ্ম মহাসচিব ঢালি কামরুজ্জামান হারুন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ইসলামী ফ্রন্ট সভাপতি অধ্যাপক আবদুর রহিম মুনিরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি মাওলানা ফেরদৌসুল আলম খান কাদেরী, স ম হামেদ হোসাইন, অধ্যক্ষ ছৈয়দ মাওলানা জসিম উদ্দীন তৈয়বী, স ম শহিদুল হক ফারুকী,

অধ্যাপক ছৈয়দ হাফেজ আহমদ, স ম শওকত আজিজ, চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইউনুস যুক্তিবাদী, চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন মাহমুদ, চট্টগ্রাম নগর দক্ষিণ সাধারণ সম্পাদক আলমগীর ইসলাম বঈদী, যুবসেনা কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা: সরওয়ার উদ্দিন, ছাত্রসেনা কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাহেদুল আলম, আইনবিষয়ক সম্পাদক মো. শাহ আলম অভি, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. নুরুল আনোয়ার হিরণ, মুহাম্মদ আলী হোসেন, মাস্টার খোরশেদ আলম প্রমুখ।

জনসভায় ঘোষিত ১৩ দফার দাবির মধ্যে আরো রয়েছে, নির্বাচনের আগে সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা, পার্বত্য জেলায় বিদেশি মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা, চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা, আরাকান আর্মিকে করিডোর না দেয়া,

মাজার মসজিদে হামলাকারীদের বিচার ও মাজার, খানকা, দরবার শরীফ ও ধর্মীয় নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা রক্ষা ও স্বাধীনতার ইতিহাস সংরক্ষণ করা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নির্বাচনকালীন সময়ে দল নিরপেক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা