০৩:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

কুমিল্লার গোমতী তীরের নটীর মসজিদ সংরক্ষণে সরকারের হস্তক্ষেপ আহবান প্রবাসী দানবীর মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরীর

  • প্রকাশের সময় : ০৫:৩৪:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • 50

মোঃ শাহজাহান বাশার,সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার

কুমিল্লার গোমতী নদীর তীরে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে এক রহস্যময় ও বেদনাময় নিদর্শন—নটীর মসজিদ। প্রায় তিন শতাব্দী আগে নির্মিত এই স্থাপনাটি ইতিহাস, লোককথা, করুণ কাহিনি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অমূল্য দলিল হলেও আজ তা ভগ্নদশায়। স্থানীয় জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সুপারিশ সত্ত্বেও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে ঐতিহাসিক এই মসজিদটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।

এই সংকটময় পরিস্থিতিতে কুমিল্লার কৃতি সন্তান, আমেরিকা প্রবাসী বিশিষ্ট সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী দানবীর মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষা, সংস্কৃতি ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে অনন্য ভূমিকা রেখে আসছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র কুমিল্লা সোসাইটি ও নর্থ আমেরিকার সাবেক সভাপতি এবং ব্রাহ্মণপাড়া মোশারফ হোসেন খান চৌধুরী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। এবার তিনি দেশের ঐতিহ্য ও ইতিহাস রক্ষায়ও সরব হলেন।

তিনি গভীর আবেগের সঙ্গে বলেন—“নটীর মসজিদ কোনো সাধারণ স্থাপনা নয়। এটি আমাদের ইতিহাসের অংশ, আমাদের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের এক জ্বলন্ত নিদর্শন। যদি আজ আমরা এটির প্রতি উদাসীন হই, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা একটি মূল্যবান ইতিহাস থেকে বঞ্চিত করব। আমি জেলা প্রশাসন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি—অবিলম্বে নটীর মসজিদের সংরক্ষণ ও সংস্কার কার্যক্রম শুরু করা হোক।”

তিনি আরও যোগ করেন, এই মসজিদ শুধু একটি স্থাপনা নয়, বরং এক কালের সংস্কৃতি, সভ্যতা, শিল্পকলা এবং নারীর আত্মত্যাগের স্মারক। এর ধ্বংস মানে ইতিহাস মুছে যাওয়া।

স্থানীয় জনশ্রুতি মতে, তৎকালীন ত্রিপুরা মহারাজার দরবার কাঁপানো শ্রেষ্ঠ বাইজি নূরজাহান নিজের অর্থে ও উদ্যোগে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু প্রথম নামাজ আদায় ব্যর্থ হওয়ায় আর কখনো এখানে আজান বা জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে নূরজাহান করুণ আত্মাহুতি দেন। সেই দুঃখগাঁথা আজও স্থানীয় লোককথায় প্রবাহিত। শতাব্দী পেরিয়ে, বটগাছের বিশাল শেকড়ে জড়িয়ে থাকা নটীর মসজিদ আজও দাঁড়িয়ে আছে নিস্তব্ধ সাক্ষী হয়ে।

অসংখ্য ইতিহাসবিদ, গবেষক ও প্রত্নতত্ত্ববিদ ইতোমধ্যে একে সংরক্ষণের যোগ্য ঘোষণা করেছেন। কিন্তু বাস্তব উদ্যোগের অভাবে দিন দিন তা ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে।

প্রবাসী দানবীর মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরীর এই উদ্যোগকে ইতোমধ্যেই সাধুবাদ জানিয়েছেন কুমিল্লার বিশিষ্ট নাগরিক, লেখক, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকরা। তারা মনে করেন—মসজিদটি শুধু কুমিল্লার নয়, বরং পুরো বাংলাদেশের ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ।

আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন—কলামিস্ট হাসান ইমাম মজুমদার, সাংবাদিক এনামুল হক ফারুক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট শাহজাহান চৌধুরী, সাংবাদিক মহিউদ্দিন মোল্লা, দৈনিক রূপসী বাংলার সম্পাদক তরুণ, কুমিল্লার কাগজ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সাংবাদিক ও কলামিস্ট ইয়াসমিন রিনা, জাকির আজাদ, শাহজাদা এমরান, সৈয়দ আহমেদ লাভলু ও গাজী জাহাঙ্গীর আলম জাবির।

এছাড়া, দৈনিক কালের কণ্ঠ প্রতিনিধি ও গীতিকার আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়, কুমিল্লা প্রতিদিন সম্পাদক মো. সুমন শরীফ, সাংবাদিক মারুফ হোসেনসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীরাও একযোগে নটীর মসজিদ সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন।

মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বিশেষভাবে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন—
“নটীর মসজিদকে রক্ষা করা মানে কুমিল্লার ইতিহাস রক্ষা করা, বাংলাদেশের ঐতিহ্য রক্ষা করা। তাই একে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার জাতীয় দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।”

স্থানীয় নাগরিক সমাজের অভিমত—যদি এখনই পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তবে নটীর মসজিদ শুধু একটি ধর্মীয় স্থাপনা হিসেবেই নয়, বরং জাতীয় পর্যায়ের ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে। এ ক্ষেত্রে কুমিল্লার অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতেও নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

নাগরিক সমাজ, সুশীল মহল, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক সমাজ এবং তরুণ প্রজন্ম—সকলকে এক হয়ে দাবি জানাতে হবে। এখনই সময়। যদি দেরি হয়, তবে ইতিহাস মুছে যাবে। নটীর মসজিদকে রক্ষায় সরকারের অবিলম্বে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

জনপ্রিয়

২০১৮ সালে সংসদে যাওয়া দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিএনপির মশাল মিছিল

কুমিল্লার গোমতী তীরের নটীর মসজিদ সংরক্ষণে সরকারের হস্তক্ষেপ আহবান প্রবাসী দানবীর মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরীর

প্রকাশের সময় : ০৫:৩৪:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মোঃ শাহজাহান বাশার,সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার

কুমিল্লার গোমতী নদীর তীরে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে এক রহস্যময় ও বেদনাময় নিদর্শন—নটীর মসজিদ। প্রায় তিন শতাব্দী আগে নির্মিত এই স্থাপনাটি ইতিহাস, লোককথা, করুণ কাহিনি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অমূল্য দলিল হলেও আজ তা ভগ্নদশায়। স্থানীয় জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সুপারিশ সত্ত্বেও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে ঐতিহাসিক এই মসজিদটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।

এই সংকটময় পরিস্থিতিতে কুমিল্লার কৃতি সন্তান, আমেরিকা প্রবাসী বিশিষ্ট সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী দানবীর মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষা, সংস্কৃতি ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে অনন্য ভূমিকা রেখে আসছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র কুমিল্লা সোসাইটি ও নর্থ আমেরিকার সাবেক সভাপতি এবং ব্রাহ্মণপাড়া মোশারফ হোসেন খান চৌধুরী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। এবার তিনি দেশের ঐতিহ্য ও ইতিহাস রক্ষায়ও সরব হলেন।

তিনি গভীর আবেগের সঙ্গে বলেন—“নটীর মসজিদ কোনো সাধারণ স্থাপনা নয়। এটি আমাদের ইতিহাসের অংশ, আমাদের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের এক জ্বলন্ত নিদর্শন। যদি আজ আমরা এটির প্রতি উদাসীন হই, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা একটি মূল্যবান ইতিহাস থেকে বঞ্চিত করব। আমি জেলা প্রশাসন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি—অবিলম্বে নটীর মসজিদের সংরক্ষণ ও সংস্কার কার্যক্রম শুরু করা হোক।”

তিনি আরও যোগ করেন, এই মসজিদ শুধু একটি স্থাপনা নয়, বরং এক কালের সংস্কৃতি, সভ্যতা, শিল্পকলা এবং নারীর আত্মত্যাগের স্মারক। এর ধ্বংস মানে ইতিহাস মুছে যাওয়া।

স্থানীয় জনশ্রুতি মতে, তৎকালীন ত্রিপুরা মহারাজার দরবার কাঁপানো শ্রেষ্ঠ বাইজি নূরজাহান নিজের অর্থে ও উদ্যোগে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু প্রথম নামাজ আদায় ব্যর্থ হওয়ায় আর কখনো এখানে আজান বা জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে নূরজাহান করুণ আত্মাহুতি দেন। সেই দুঃখগাঁথা আজও স্থানীয় লোককথায় প্রবাহিত। শতাব্দী পেরিয়ে, বটগাছের বিশাল শেকড়ে জড়িয়ে থাকা নটীর মসজিদ আজও দাঁড়িয়ে আছে নিস্তব্ধ সাক্ষী হয়ে।

অসংখ্য ইতিহাসবিদ, গবেষক ও প্রত্নতত্ত্ববিদ ইতোমধ্যে একে সংরক্ষণের যোগ্য ঘোষণা করেছেন। কিন্তু বাস্তব উদ্যোগের অভাবে দিন দিন তা ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে।

প্রবাসী দানবীর মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরীর এই উদ্যোগকে ইতোমধ্যেই সাধুবাদ জানিয়েছেন কুমিল্লার বিশিষ্ট নাগরিক, লেখক, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকরা। তারা মনে করেন—মসজিদটি শুধু কুমিল্লার নয়, বরং পুরো বাংলাদেশের ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ।

আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন—কলামিস্ট হাসান ইমাম মজুমদার, সাংবাদিক এনামুল হক ফারুক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট শাহজাহান চৌধুরী, সাংবাদিক মহিউদ্দিন মোল্লা, দৈনিক রূপসী বাংলার সম্পাদক তরুণ, কুমিল্লার কাগজ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সাংবাদিক ও কলামিস্ট ইয়াসমিন রিনা, জাকির আজাদ, শাহজাদা এমরান, সৈয়দ আহমেদ লাভলু ও গাজী জাহাঙ্গীর আলম জাবির।

এছাড়া, দৈনিক কালের কণ্ঠ প্রতিনিধি ও গীতিকার আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়, কুমিল্লা প্রতিদিন সম্পাদক মো. সুমন শরীফ, সাংবাদিক মারুফ হোসেনসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীরাও একযোগে নটীর মসজিদ সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন।

মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বিশেষভাবে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন—
“নটীর মসজিদকে রক্ষা করা মানে কুমিল্লার ইতিহাস রক্ষা করা, বাংলাদেশের ঐতিহ্য রক্ষা করা। তাই একে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার জাতীয় দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।”

স্থানীয় নাগরিক সমাজের অভিমত—যদি এখনই পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তবে নটীর মসজিদ শুধু একটি ধর্মীয় স্থাপনা হিসেবেই নয়, বরং জাতীয় পর্যায়ের ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে। এ ক্ষেত্রে কুমিল্লার অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতেও নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

নাগরিক সমাজ, সুশীল মহল, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক সমাজ এবং তরুণ প্রজন্ম—সকলকে এক হয়ে দাবি জানাতে হবে। এখনই সময়। যদি দেরি হয়, তবে ইতিহাস মুছে যাবে। নটীর মসজিদকে রক্ষায় সরকারের অবিলম্বে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।