
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির
রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরুদ পাঠ করা যেমন ফজিলতপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন আমল, যথাস্থানে ও যথাসময়ে দরুন্দ পাঠ ছেড়ে দেওয়া তেমন গর্হিত কাজ। দরুদ শরীফ না পড়া, না পেশ না করার কিছু ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হলো-
১. ধ্বংস ও অপমান অনিবার্য: একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদের মিম্বরের উঠার সময় তিনটি সিঁড়িতে পা রাখার সময় তিনবার ‘আমিন’ বলেছিলেন। নামাজান্তের উপস্থিত সাহাবায়ে কেরামগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আজকে এমন একটি কাজ আপনি করলেন। যা এর আগে কখনও আপনাকে করতে দেখিনি। এর কারণ কী? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আমি যখন মিম্বারের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন জিবরাইল (আ.) বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক; যে পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেয়েছে। অথচ তাদের খেদমত করে জান্নাত অর্জন করতে পারল না। তখন আমি তাকে সমর্থন করে ‘আমিন’ বললাম। এরপর তিনি বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক: যে রমজান মাস পেল অথচ নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না। আমি বললাম ‘আমিন’। জিবরাইল (আ.) এরপর বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক: যার সামনে আমার নাম আলোচিত বা উচ্চারিত হয় অথচ সে আমার ওপর দুরুদ পেশ করে না। আমি তার বক্তব্যকে সমর্থন করে ‘আমিন’ বললাম।’ (ইবনে হিব্বান। ৯০৮: আল-আদাবুল মুফরাদ ৬৪৬)।
এ ছাড়া আনু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাসিকা ধূলায় ধূসরিত হোক মানে সে অপমানিত হোক; যায় সামনে আমার নাম উচ্চারিত হয়েছে অথচ সে আমার ওপর দরুদ পড়ে না।’ (তিরমিজি : ৩৫৪৫। মিশকাত: ৯২৭)।
২. রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দৃষ্টিতে কৃপণ:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার সামনে আমার নাম নেওয়া হলো কিন্তু সে আমার ওপর দরুদ পাঠ করল না। সে খুবই কৃপণ।’ (তিরমিজি। ৩৫৪৬)।
আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক দিন বললেন, ‘আমি কি তোমাদের বলব, সবচেয়ে বড় কৃপণ কে? উপস্থিত সাহাবারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল। নিশ্চয়ই বলুন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যার সামনে আমার নাম নেওয়া হলো। কিন্তু সে আমার ওপর দরুদ পড়ল না; সে হলো। সবচেয়ে বড় কৃপণ
৩. জান্নাতের রাস্তাচ্যুত হয়ে জাহান্নামি হওয়া। রাসুলুল্লহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর দরুদ পাঠ করা ভুলে গেল। সে যেন আসলে জান্নাতের পথ ভুলে গেল।’
(ইবনে মাজাহ। ৯০৮)। হুসাইন বিন আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার নাম শোনার পরও দরুদ পাঠ করা থেকে দূরে সরে থাকরে। সে জান্নাতের রাস্তা থেকে দূরে সরে থাকবে। (আত-তারগিব। ৩৮৪)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, জিবরাইল (আ.) এসে বললেন, যার সামনে আপনার নাম উচ্চারিত হলো অথচ সে আপনার প্রতি দরুদ পাঠ করল না। অতঃপর মারা গেল, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আর আল্লাহ তাকে তার রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দিবেন। জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি আমিন বলুন। অতঃপর আমি ‘আমিন’ বললাম। (ইবনে হিব্বান: ২৩৮৭)।
৪. কেয়ামতের দিবসে আফসোসের কারণ:, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নৌ ‘যখন কোনও জাতি কোনও বৈঠকে বসে এবং সেখানে এখানে যদি তারা আল্লাহকে স্মরণ না করে ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুন্দ পাঠ না করে। তাহলে তাদের এ কাজটি কিয়ামতের দিন আফসোসের কারণ হবে, যদিও তারা পুরস্কার হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করে। (মুস্তাদরেকে হাকেম, ১/৫৫০)।
৫. লাঞ্ছনা অনিবার্য এবং হতভাগ্য স্বীকৃতি:, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সেই ব্যক্তি লাঞ্ছিত হোক, যার সামনে আমার নাম আলোচনা হলো: কিন্তু সে আমার ওপর তাজিম /সম্মান করল না। (মিশকাত, ১/৮৬)।
জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি হতভাগ্য। যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করা হলো অথচ সে আমার ওপর দরুদ পাঠ করল না। (আমান, ইবনুস সুন্নি। ৩৮১)





















