০১:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

আধানিবিড় গলদা চাষে অভিজ্ঞতা অর্জনে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার চিংড়ি চাষিদের ডুমুরিয়া সফর

  • প্রকাশের সময় : ০৯:৫০:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
  • 81

শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি:

মৎস্য অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট (SCMFP)-এর আওতায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ২৫ জন চিংড়ি ক্লাস্টারভুক্ত চাষি সম্প্রতি খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় এক অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরে অংশগ্রহণ করেছেন। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল — আধানিবিড় (সেমি ইনটেনসিভ) গলদা চাষ পদ্ধতি, ঘের ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বিষয়ে সফল চাষিদের কাছ থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত দিক সম্পর্কে ধারণা নেওয়া।

সফরকারী চাষিদের ডুমুরিয়া উপজেলা মৎস্য দপ্তরের পক্ষ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মোঃ জিল্লুর রহমান রিগ্যান। এসময় দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও উপস্থিত ছিলেন।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম সফরের নেতৃত্ব দেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সহকারি মৎস্য অফিসার মো: লুৎফর রহমান, প্রকল্পের মেরিন ফিশারিজ অফিসার মোঃ রবিউল ইসলাম, সদর মৎস্য দপ্তরের মাঠকর্মী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সফরকালে চাষিরা প্রথমে ডুমুরিয়া উপজেলার বড়ডাঙ্গা চিংড়ি চাষি ক্লাস্টার-১ ও আধানিবিড় গলদা প্রজেক্ট পরিদর্শন করেন। এটি আধানিবিড় গলদা চাষে একটি সফল মডেল হিসেবে পরিচিত। পরিদর্শনকালে উভয় ক্লাস্টারের চাষিদের মধ্যে এক প্রাণবন্ত অভিজ্ঞতা বিনিময় ও প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা পর্বে বড়ডাঙ্গা ক্লাস্টারের সফল গলদা চাষি শুভেন্দু বিশ্বাস, জয়প্রকাশ বিশ্বাস, সুজিত মন্ডল, সাব্বির হোসেন রাজু এবং ক্লাস্টার লিডার শেখ মাহতাব হোসেন তাঁদের বাস্তব অভিজ্ঞতা, চাষ পদ্ধতি, আয়-ব্যয় হিসাব, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, বাজার সংযোগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।

প্রযুক্তিগত দিক ও বাস্তব চিত্র

চাষিরা সরেজমিনে বড়ডাঙ্গা ক্লাস্টারের ঘের পরিদর্শন করেন। ঘের মালিকরা জাল টেনে মাছ ও চিংড়ি দেখান। উপস্থিত সবাই উৎপাদনের মান ও গলদার বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

পরিদর্শনে দেখা যায়, এই ক্লাস্টারে সেমি ইনটেনসিভ (All male) গলদা চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। ফিশটেক সরবরাহকৃত পুরুষ গলদা পিএল ব্যবহার করে বায়োসিকিউরিটি, পানির গভীরতা বৃদ্ধি, নিয়মিত জলমান নিয়ন্ত্রণ, মানসম্মত খাদ্য সরবরাহ, সঠিক মজুদ ঘনত্ব, মোলাসেস ও প্রোবায়োটিক ব্যবহারসহ পূর্ণাঙ্গ প্রটোকল মেনে চাষ পরিচালনা করা হচ্ছে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মাত্র ৮৩ দিনে গলদার গড় ওজন হয়েছে ২৫–৩০ গ্রাম, যা প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় অনেক বেশি। ফলে একই ঘেরে কম সময়ে ও তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উচ্চপর্যায়ের উপস্থিতি ও বক্তব্য

এই সময় উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিএম সেলিম, খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ বদরুজ্জামান, এবং মৎস্য অধিদপ্তর, খুলনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মোঃ মনজুরুল ইসলাম।

বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, বড়ডাঙ্গা ক্লাস্টারের এই মডেলটি দেশের অন্যান্য চিংড়ি চাষ এলাকা, বিশেষ করে সাতক্ষীরা জেলায় অনুসরণ করলে উৎপাদন ২–৩ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি সম্ভব। এর মাধ্যমে চাষিদের আয় বাড়বে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং দেশের চিংড়ি রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।

চাষিদের অনুভূতি ও প্রত্যয়

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার অংশগ্রহণকারী চাষিরা জানান, এই সফরের মাধ্যমে তারা আধুনিক গলদা চাষ প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রত্যক্ষ ধারণা পেয়েছেন। তাঁরা ভবিষ্যতে নিজের ঘেরে পুরুষ গলদা পিএল মজুদ, উন্নত নার্সারি ব্যবস্থাপনা, বায়োসিকিউরিটি বজায় রাখা এবং ঘেরের গভীরতা বৃদ্ধি করে আধানিবিড় পদ্ধতিতে চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা মৎস্য অধিদপ্তরের কাছে ভবিষ্যতে এই ধরনের আরও প্রশিক্ষণ, বিনিময় সফর ও কারিগরি সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

এই সফরের মাধ্যমে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার চাষিরা কেবল একটি সফল চাষ পদ্ধতির সাথে পরিচিত হননি, বরং আধুনিক ও ব্যবসায়িকভাবে টেকসই গলদা চাষের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন। অভিজ্ঞতা বিনিময়ভিত্তিক এই ধরনের কার্যক্রম ভবিষ্যতে দেশের চিংড়ি খাতকে আরও এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপস্থিত কর্মকর্তা ও চাষিরা।

জনপ্রিয়

২০১৮ সালে সংসদে যাওয়া দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিএনপির মশাল মিছিল

আধানিবিড় গলদা চাষে অভিজ্ঞতা অর্জনে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার চিংড়ি চাষিদের ডুমুরিয়া সফর

প্রকাশের সময় : ০৯:৫০:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি:

মৎস্য অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট (SCMFP)-এর আওতায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ২৫ জন চিংড়ি ক্লাস্টারভুক্ত চাষি সম্প্রতি খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় এক অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরে অংশগ্রহণ করেছেন। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল — আধানিবিড় (সেমি ইনটেনসিভ) গলদা চাষ পদ্ধতি, ঘের ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বিষয়ে সফল চাষিদের কাছ থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত দিক সম্পর্কে ধারণা নেওয়া।

সফরকারী চাষিদের ডুমুরিয়া উপজেলা মৎস্য দপ্তরের পক্ষ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মোঃ জিল্লুর রহমান রিগ্যান। এসময় দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও উপস্থিত ছিলেন।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম সফরের নেতৃত্ব দেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সহকারি মৎস্য অফিসার মো: লুৎফর রহমান, প্রকল্পের মেরিন ফিশারিজ অফিসার মোঃ রবিউল ইসলাম, সদর মৎস্য দপ্তরের মাঠকর্মী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সফরকালে চাষিরা প্রথমে ডুমুরিয়া উপজেলার বড়ডাঙ্গা চিংড়ি চাষি ক্লাস্টার-১ ও আধানিবিড় গলদা প্রজেক্ট পরিদর্শন করেন। এটি আধানিবিড় গলদা চাষে একটি সফল মডেল হিসেবে পরিচিত। পরিদর্শনকালে উভয় ক্লাস্টারের চাষিদের মধ্যে এক প্রাণবন্ত অভিজ্ঞতা বিনিময় ও প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা পর্বে বড়ডাঙ্গা ক্লাস্টারের সফল গলদা চাষি শুভেন্দু বিশ্বাস, জয়প্রকাশ বিশ্বাস, সুজিত মন্ডল, সাব্বির হোসেন রাজু এবং ক্লাস্টার লিডার শেখ মাহতাব হোসেন তাঁদের বাস্তব অভিজ্ঞতা, চাষ পদ্ধতি, আয়-ব্যয় হিসাব, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, বাজার সংযোগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।

প্রযুক্তিগত দিক ও বাস্তব চিত্র

চাষিরা সরেজমিনে বড়ডাঙ্গা ক্লাস্টারের ঘের পরিদর্শন করেন। ঘের মালিকরা জাল টেনে মাছ ও চিংড়ি দেখান। উপস্থিত সবাই উৎপাদনের মান ও গলদার বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

পরিদর্শনে দেখা যায়, এই ক্লাস্টারে সেমি ইনটেনসিভ (All male) গলদা চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। ফিশটেক সরবরাহকৃত পুরুষ গলদা পিএল ব্যবহার করে বায়োসিকিউরিটি, পানির গভীরতা বৃদ্ধি, নিয়মিত জলমান নিয়ন্ত্রণ, মানসম্মত খাদ্য সরবরাহ, সঠিক মজুদ ঘনত্ব, মোলাসেস ও প্রোবায়োটিক ব্যবহারসহ পূর্ণাঙ্গ প্রটোকল মেনে চাষ পরিচালনা করা হচ্ছে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মাত্র ৮৩ দিনে গলদার গড় ওজন হয়েছে ২৫–৩০ গ্রাম, যা প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় অনেক বেশি। ফলে একই ঘেরে কম সময়ে ও তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উচ্চপর্যায়ের উপস্থিতি ও বক্তব্য

এই সময় উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিএম সেলিম, খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ বদরুজ্জামান, এবং মৎস্য অধিদপ্তর, খুলনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মোঃ মনজুরুল ইসলাম।

বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, বড়ডাঙ্গা ক্লাস্টারের এই মডেলটি দেশের অন্যান্য চিংড়ি চাষ এলাকা, বিশেষ করে সাতক্ষীরা জেলায় অনুসরণ করলে উৎপাদন ২–৩ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি সম্ভব। এর মাধ্যমে চাষিদের আয় বাড়বে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং দেশের চিংড়ি রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।

চাষিদের অনুভূতি ও প্রত্যয়

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার অংশগ্রহণকারী চাষিরা জানান, এই সফরের মাধ্যমে তারা আধুনিক গলদা চাষ প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রত্যক্ষ ধারণা পেয়েছেন। তাঁরা ভবিষ্যতে নিজের ঘেরে পুরুষ গলদা পিএল মজুদ, উন্নত নার্সারি ব্যবস্থাপনা, বায়োসিকিউরিটি বজায় রাখা এবং ঘেরের গভীরতা বৃদ্ধি করে আধানিবিড় পদ্ধতিতে চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা মৎস্য অধিদপ্তরের কাছে ভবিষ্যতে এই ধরনের আরও প্রশিক্ষণ, বিনিময় সফর ও কারিগরি সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

এই সফরের মাধ্যমে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার চাষিরা কেবল একটি সফল চাষ পদ্ধতির সাথে পরিচিত হননি, বরং আধুনিক ও ব্যবসায়িকভাবে টেকসই গলদা চাষের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন। অভিজ্ঞতা বিনিময়ভিত্তিক এই ধরনের কার্যক্রম ভবিষ্যতে দেশের চিংড়ি খাতকে আরও এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপস্থিত কর্মকর্তা ও চাষিরা।