১১:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

কানাডার জীবন

  • প্রকাশের সময় : ০৮:৪৩:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
  • 87

মোঃমামুন উর রশীদ

বাংলাদেশের সাথে এখানকার জীবণের অনেক পার্থক্য ! বাংলাদেশে থাকতে বলতে গেলে কোন কাজই নিজের করতে হতো না, রান্নাবান্না, ঘরের যাবতীয় কাজ সবই বুয়ারা করতো। মোটামুটি ভালো একটা চাকরি করলে যে কেহই কাজের লোক রাখতে পারে।

সে সময় অফিসে আমাদের আলাদা আলাদা কম্পিউটার ছিল না, কিছু টাইপ করতে হলে হাতে লিখে কম্পিউটার অপারেটরকে দিলে সে টাইপ করে দিত। অফিসের পিয়ন ফটোকপি, ফ্যাক্স, চা বানানোসহ যাবতীয় কাজ করতো।

আর এখানে কানাডাতে যে যত বড় পদেই চাকরি করুক না কেন, নিজের চা কফি নিজেকেই বানাতে হয়, ফ্যাক্স , ফটোকপি, টাইপ নিজেরটা নিজেকেই করতে হয়। পুরো সপ্তাহ অফিস করে রান্নাবান্না, ঘর পরিষ্কারসহ ঘরের যাবতীয় কাজ নিজের হাতে করে তারপরও বাগান করে, বেড়াতে যায়, মেহমানদারীতো আছেই।

সব কাজই নিজেকে করতে হয়, কাজের লোক-ড্রাইভার কনসেপ্টই এখানে নেই, আর তাদের উপর নির্ভরশীলতার প্রশ্নও সে কারনে আসে না। এখানে এসে তাই অনেক স্কিল অর্জন করতে হয়েছে, জীবনের প্রতি দৃষ্টিভংগীরও অনেক পরিবর্তন ঘটেছে।

এদেশে এসে অনেক অদ্ভুত জিনিস দেখলাম এবং শিখলাম- কেউ যখন গরীব কাউকে কিছু দান করে, দাতা জানে না গ্রহীতা কে, আবার গ্রহীতা জানে না দাতা কে। এমনকি অফিসে যখন কোন সহকর্মী সবাইকে খাওয়ায়, বেশীরভাগ সময় লোকজন জানে না কে খাওয়াচ্ছে।

আমাদের অফিসে প্রায়ই মজার মজার কেক, পেস্ট্রি, কুকি ঘর থেকে নিজের হাতে বানিয়ে সহকর্মীরা আমাদের অফিসের ডাইনিং টেবিলে রেখে দেয়, সবাই খুব মজা করে খায় কিন্তু জানে না কে এনেছে খাওয়াটা। নাম জাহির করার কোন প্রবণতাই মানুষের মধ্যে নেই। কেউ কখনো কারো বাড়ি, গাড়ি, পদবী এসব নিয়ে গল্প করে না।

গল্পের বিষয় বস্তু হচ্ছে কোথায় ঘুরতে গেল, কোন জায়গায় কি ভাল লাগলো ইত্যাদি। আমাদের মতো টাকা-পয়সা, বাড়ি গাড়ি, খ্যাতি এসবের পিছনে এরা ছুটে না। এরা জীবনকে অনেক সুন্দরভাবে উপভোগ করে এবং সুস্থভাবে অনেকদিন বাঁচে।

আরো মজার ব্যাপার হল, একই অফিসে দশ বছর চাকরী করেও অনেকেই জানে না কার কি পদবী, পদবী নিয়ে মাথাও ঘামায় না। শুধু জানে কে কি কাজের দায়িত্বে আছে, তাও যদি আপনার সাথে একই টিমে তাকে কাজ করতে হয়। আপনি আপনার কাজে নিষ্ঠাবান কিনা, উপকারী মনোভাব আছে কিনা, ভালো মানুষ কিনা সেটাই তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এখানে বস্, স্যার, ম্যডাম- এসব কোন কনসেপ্ট নেই ! অফিসে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবাই সবাইকে নাম ধরে ডাকে, সবাই সবার বন্ধুর মতো। বসকে দেখলে উঠে দাঁড়ানোর কোন ব্যাপার নেই। সবাই সবার প্রতি মর্যাদাশীল।

পদমর্যাদা দিয়ে কেউ কারো উপর ছড়ি ঘুরায় না।”গাহি সাম্যের গান, মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান”- একথার মর্মার্থ এদেশে না আসলে বোধয় এমন করে উপলব্ধি করতাম না!

জনপ্রিয়

চট্টগ্রাম লালদীঘি মাঠে বিশাল জনসভায় বৃহত্তর সুন্নী জোট নেতৃবৃন্দ কোনো মহলের ষড়যন্ত্রে জাতীয় নির্বাচন বানচাল হলে দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে

কানাডার জীবন

প্রকাশের সময় : ০৮:৪৩:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

মোঃমামুন উর রশীদ

বাংলাদেশের সাথে এখানকার জীবণের অনেক পার্থক্য ! বাংলাদেশে থাকতে বলতে গেলে কোন কাজই নিজের করতে হতো না, রান্নাবান্না, ঘরের যাবতীয় কাজ সবই বুয়ারা করতো। মোটামুটি ভালো একটা চাকরি করলে যে কেহই কাজের লোক রাখতে পারে।

সে সময় অফিসে আমাদের আলাদা আলাদা কম্পিউটার ছিল না, কিছু টাইপ করতে হলে হাতে লিখে কম্পিউটার অপারেটরকে দিলে সে টাইপ করে দিত। অফিসের পিয়ন ফটোকপি, ফ্যাক্স, চা বানানোসহ যাবতীয় কাজ করতো।

আর এখানে কানাডাতে যে যত বড় পদেই চাকরি করুক না কেন, নিজের চা কফি নিজেকেই বানাতে হয়, ফ্যাক্স , ফটোকপি, টাইপ নিজেরটা নিজেকেই করতে হয়। পুরো সপ্তাহ অফিস করে রান্নাবান্না, ঘর পরিষ্কারসহ ঘরের যাবতীয় কাজ নিজের হাতে করে তারপরও বাগান করে, বেড়াতে যায়, মেহমানদারীতো আছেই।

সব কাজই নিজেকে করতে হয়, কাজের লোক-ড্রাইভার কনসেপ্টই এখানে নেই, আর তাদের উপর নির্ভরশীলতার প্রশ্নও সে কারনে আসে না। এখানে এসে তাই অনেক স্কিল অর্জন করতে হয়েছে, জীবনের প্রতি দৃষ্টিভংগীরও অনেক পরিবর্তন ঘটেছে।

এদেশে এসে অনেক অদ্ভুত জিনিস দেখলাম এবং শিখলাম- কেউ যখন গরীব কাউকে কিছু দান করে, দাতা জানে না গ্রহীতা কে, আবার গ্রহীতা জানে না দাতা কে। এমনকি অফিসে যখন কোন সহকর্মী সবাইকে খাওয়ায়, বেশীরভাগ সময় লোকজন জানে না কে খাওয়াচ্ছে।

আমাদের অফিসে প্রায়ই মজার মজার কেক, পেস্ট্রি, কুকি ঘর থেকে নিজের হাতে বানিয়ে সহকর্মীরা আমাদের অফিসের ডাইনিং টেবিলে রেখে দেয়, সবাই খুব মজা করে খায় কিন্তু জানে না কে এনেছে খাওয়াটা। নাম জাহির করার কোন প্রবণতাই মানুষের মধ্যে নেই। কেউ কখনো কারো বাড়ি, গাড়ি, পদবী এসব নিয়ে গল্প করে না।

গল্পের বিষয় বস্তু হচ্ছে কোথায় ঘুরতে গেল, কোন জায়গায় কি ভাল লাগলো ইত্যাদি। আমাদের মতো টাকা-পয়সা, বাড়ি গাড়ি, খ্যাতি এসবের পিছনে এরা ছুটে না। এরা জীবনকে অনেক সুন্দরভাবে উপভোগ করে এবং সুস্থভাবে অনেকদিন বাঁচে।

আরো মজার ব্যাপার হল, একই অফিসে দশ বছর চাকরী করেও অনেকেই জানে না কার কি পদবী, পদবী নিয়ে মাথাও ঘামায় না। শুধু জানে কে কি কাজের দায়িত্বে আছে, তাও যদি আপনার সাথে একই টিমে তাকে কাজ করতে হয়। আপনি আপনার কাজে নিষ্ঠাবান কিনা, উপকারী মনোভাব আছে কিনা, ভালো মানুষ কিনা সেটাই তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এখানে বস্, স্যার, ম্যডাম- এসব কোন কনসেপ্ট নেই ! অফিসে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবাই সবাইকে নাম ধরে ডাকে, সবাই সবার বন্ধুর মতো। বসকে দেখলে উঠে দাঁড়ানোর কোন ব্যাপার নেই। সবাই সবার প্রতি মর্যাদাশীল।

পদমর্যাদা দিয়ে কেউ কারো উপর ছড়ি ঘুরায় না।”গাহি সাম্যের গান, মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান”- একথার মর্মার্থ এদেশে না আসলে বোধয় এমন করে উপলব্ধি করতাম না!