
অরুণ কৃষ্ণ পাল (লালমাই প্রতিনিধি)
দরজায় কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। উৎসবকে ঘিরে কুমিল্লার লালমাইয়ে ১৭টি মন্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় মাটির প্রতিমা হয়ে উঠছে অপরূপা। একই সাথে দুর্গোৎসবকে জাঁকজমকপূর্ণ করতে দিনরাত মন্দিরগুলোতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর দেবীর বোধন ও মহাপঞ্চমী এবং ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীপূজার মধ্যে দিয়ে মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর মহাসপ্তমী এবং ৩০ সেপ্টেম্বর মহা অষ্টমী অনুষ্ঠিত হবে। ১ অক্টোবর মহানবমী এবং ২ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটবে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এ বছর দুর্গাদেবী গজে বা হাতির পিঠে চড়ে মর্ত্যে আগমন করবেন। আর দোলা বা পালকিতে চড়ে ফিরে যাবেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বাগমারা সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি, পশ্চিম অশ্বত্থতলা রক্ষা কালিবাড়ী, বেতিয়াপাড়া পূজা মন্ডপ, নাওড়া সূত্রধরপাড়া, মনোহরপুর হরি সংঘ, চেঙ্গাহাটা শিব দূর্গা মন্দির, মঘের কলমিয়া পূজা মন্ডপ, অগ্নিবীণা সংঘ, জয়শ্রী সার্বজনিন দূর্গা মন্দির, ভোরা জগতপুর গৌর নিতাই সেবাশ্রম, আলীশ্বর সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি, বাউল গোসাই আশ্রম যুব সংঘ, রাণীচৌঁ দূর্গাপূজা মন্ডপ, পশ্চিম পেরুল বিশালক্ষী পূজা মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। প্রতিমায় চলছে রং তুলির আঁচড়। প্রতিমা তৈরি ও সাজসজ্জার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরির কারিগররা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডেকোরেটররা শুরু করেছে তোরণ নির্মাণ ও আলোকসজ্জার কাজ।
প্রতিমা তৈরির কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছরই তারা অধীর আগ্রহে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরির কাজের অপেক্ষায় থাকেন। এরমধ্যে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। এখনও কিছু প্রতিমায় রং দেয়া বাকি থাকলেও যথাসময়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হবে। নির্ধারিত সময়ের আগেই দুর্গা দেবীর আরাধনার জন্য মন্ডপগুলো প্রস্তুত করা হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট লালমাই উপজেলার সভাপতি সুমন রায় চৌধুরী বলেন, প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে, সবকিছু মিলিয়ে উপজেলার পূজামন্ডপগুলোতে চলছে শারদীয় আমেজ। এদিকে শারদীয় দুর্গোৎসবে শান্তি-শৃঙ্খলা ও উৎসবের আমেজ বজায় রাখতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি প্রতিটি পূজামন্ডপে আমাদেরও সেচ্ছাসেবক কর্মী দায়িত্ব পালন করবে। আশা করছি কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই পূজা শেষ করতে পারবো।
লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ শহীদুল ইসলাম বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে নেয়া হয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা। পূজাকে ঘিরে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। ইতোমধ্যে পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে একের পর এক মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। সেই সঙ্গে পূজা চলাকালীন গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ অবস্থায় রয়েছে।
লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিমাদ্রী খীসা দৈনিক কুমিল্লার জমিনকে জানান, লালমাইয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপনের লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য ও সনাতন ধর্মের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে উপজেলা পর্যায়ে প্রস্তুতিমূলক সভা সম্পন্ন হয়েছে। পূজায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রতিটা মন্দিরেই পুলিশের পাশাপাশি আনসার ও গ্রাম পুলিশ কাজ করবে। সকলের অংশগ্রহণে গত বছরের ন্যায় এবারও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।





















