
মোঃ শাহজাহান বাশার, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশের রাজনীতির নানা অধ্যায়ে আওয়ামী লীগের উত্থান, বিপুল বিজয়, আবার ধীরে ধীরে স্বৈরতান্ত্রিক চরিত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার বিষয়গুলোকে ঘিরে দলটির তিন কালের নয়টি গোপন কাহিনি বর্ণনা করলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত নবম সংসদ, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার দশম সংসদ এবং রাতের ভোটের বিতর্কিত একাদশ সংসদ— এই তিন কালের ভেতর থেকে কিছু চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, এই ঘটনাপ্রবাহই শেষ পর্যন্ত বাঙালির পলায়নপর স্বভাবের ঐতিহাসিক নাটক মঞ্চস্থ করেছে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে।
রনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিশ্চিত ছিল তারা বিজয়ী হবে, তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা এসেছিল, তা শেখ হাসিনার কল্পনারও বাইরে ছিল। নবীন সংসদ সদস্যদের দেখে বিস্মিত হয়ে শেখ হাসিনা নিজেই প্রশ্ন করেছিলেন, মোট কতজন এমপি নির্বাচিত হয়েছেন এবং কারা প্রথমবারের মতো আসন পেয়েছেন। তখনকার অভ্যন্তরীণ আলোচনায় শেখ হাসিনা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি কারো কথায় আর চলবেন না— আল্লাহ তাঁকে ক্ষমতায় এনেছেন, আল্লাহই তাঁকে রক্ষা করবেন। এই বক্তব্য থেকেই পরবর্তী সময়ে তাঁর একক কর্তৃত্বের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
মন্ত্রিসভা গঠন উপলক্ষে বঙ্গভবনের অনুষ্ঠান ঘিরে ঘটে যায় নানা নাটকীয়তা। রনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বর্ণনা করেন, কীভাবে অনেক প্রবীণ এমপি মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন এবং অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে প্রত্যাশা-হতাশার দোলাচলে পড়ে যান।
বিশেষ করে পটুয়াখালী সদর আসনের প্রবীণ এমপি অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়ার ঘটনা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রনি জানান, বঙ্গভবনে প্রবেশের সময় থেকে অনুষ্ঠান শেষে ফিরে আসা পর্যন্ত শাহজাহান মিয়া নিজের টেলিভিশনে ছবি দেখানোর জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা চালান। একাধিকবার আগে দাঁড়ানো, দেরিতে বসা, এমনকি ক্যামেরার সামনে থাকার জন্য কৌশল অবলম্বন করেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর স্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, টেলিভিশনে দেখা না যাওয়ায় তাঁর পরিশ্রম বিফল হলো।
অনুষ্ঠানে যারা মন্ত্রিত্বের স্বপ্ন দেখেছিলেন কিন্তু নাম পাননি, তাঁদের হতাশা ও ক্ষোভও বর্ণনা করেন রনি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কিংবা শেখ সেলিমের মতো প্রভাবশালী নেতারাও মন্ত্রী না হয়ে বিমর্ষ হয়ে পড়েন। এমনকি একজন নারী কর্মকর্তা যখন শেখ সেলিমকে সম্মানিত বিচারপতির জন্য আসন ছাড়ার অনুরোধ করেন, তিনি প্রচণ্ড রাগে তিরস্কার করেন।
গোলাম মাওলা রনি জানান, তিনি আওয়ামী লীগের তিন কালের নয়টি কাহিনি একে একে তুলে ধরবেন। আজকের আলোচনায় মাত্র দুটি কাহিনি বলা হলো। পাঠকের আগ্রহ এবং কর্তৃপক্ষের অনুমোদন থাকলে ভবিষ্যতে একই শিরোনামে বাকি সাতটি কাহিনি প্রকাশ করা হবে।