
রিপোর্টার , সমরেশ রায় ও শম্পা দাস, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ
আজ ২২শে জুলাই মঙ্গলবার, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আজিজুল হকের মৃত্যু হয় সল্টলেকের একটি হাসপাতালে সোমবার। আজ তার মরদেহ নিয়ে কলেজস্ট্রিট কফি হাউসের সামনে আনা হয় এবং সেখানে একে একে শেষ শ্রদ্ধা জানান, মরদের সাথে সঙ্গে ছিলেন তাহার কন্যা অগ্নিহোত্রী শাহেদা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কমরেড বাসুদেব আচারিয়া, দেবাঞ্জন দে, কমরেড রবীন্দ্র দেব, শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বুক সেলার্স অফ গিল্ডের সুধাংশু শেখর দে, সহ অন্যান্য নেতা-নেত্রীরা। ৮৫ বছর বয়সে চির বিদায় নিলেন নকশাল পন্থী লড়াকু নেতা আজিজুল হক। গভীরভাবে শোক প্রকাশ করেন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিনি তাহার উদ্দেশ্যে একটি বার্তা পাঠান। আজ বেলা একটা নাগাদ, লাল স্যালুট ও গানের মধ্য দিয়ে শেষ বিদায় জানালেন এবং মরণোত্তম দেহ দানের জন্য তার দেহ মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল এর হাতে তুলে দিলেন। তিনি জীবিত অবস্থায় তাহার চোখ ও দেহ দান করে গিয়েছিলেন, তাই আজ সকলের চোখের জলে শেষ বিদায় জানিয়ে দিলেন, লালস্যা লুটের মধ্য দিয়ে, আজিজুল হক অমর রহে, তোমায় আমরা ভুলছি না ভুলবো না। যিনি নকশাল আন্দোলন করতে গিয়ে দীর্ঘ সময় জেলে কাটিয়েছিলেন, পুলিশের হাতে বহু অত্যাচার সহ্য করেছিলেন এবং নকশাল বাড়ি আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন, তাহার জন্ম ১৯৪২ সালে হাওড়া জেলার উলবেরড়য়া মহকুমার রণমহল গ্রামে, রাজনৈতিক আন্দোলনে জড়িয়ে নিজের বাবার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়ে গরীবদের মধ্যে জমি বিলিয়ে দিয়েছিলেন আজিজুল হক। কলকাতায় পড়তে এসে, 17 বছর বয়সে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ করেন , এবং আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন। সময় গণআন্দোলনে জ্যোতি বসুর ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলেও রাজনৈতিক লাইনে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করতেন। এরপর নকশালবাড়ি আন্দোলনের পর সুন্দরবন এলাকায় সংগঠনের কাজে হাত দেন , ১৯৭০ সালে ব্যাপক পুলিশি ধরপাকরে গ্রেপ্তার হন আজিজুল হক, কিন্তু জেলের মধ্যে প্রতিবাদ চালাতে ভুলেননি, তিনি প্রতিবাদ করে গেছেন। ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি জেল থেকে মুক্তি পান, জেলের বাইরে বেরিয়ে তৈরি করেন চারুম মজুমদার পন্থী সিপিআই (এমএল) দ্বিতীয় কেন্দ্র কমিটি, দীর্ঘ পাঁচ ছয় বছর এই কেন্দ্র কমিটি গেরিলা পদ্ধতিতে লড়াই চালিয়ে যান বাংলা বিহারের বিস্তীর্ণ এলাকায়, ১৯৮২ সালে ফের গ্রেফতার হন আজিজুল হক, জেলের মধ্যে অকথ্য অত্যাচার চালানো হয় বলে আজিজুলের ওপর অভিযোগ উঠে, খবর পেয়ে দেখা করতে যান তদানীন্তন দুই মন্ত্রী দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ও যতীন চক্রবর্তী। দুজনেই আজিজুল কে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করে, ১৯৮৯ সালে দ্বিতীয় বারের জন্য মুক্তি পান এরপর থেকে তাকে আর রাজনৈতিক মহলে দেখা যায়নি।, তারপর থেকেই তিনি পত্রিকায় লেখা শুরু করেন, এই লেখা ১৮ বছর পরে পুস্তিকাকারে প্রকাশিত হয়, জেলের মধ্যে বন্দিদের উপর কিভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল তাহার কাহিনী তুলে ধরেন। সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের সময় বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধিতা লেও অন্য লেখকদের মতো তাল মেলাননি। তিনি ছিলেন চিন্তাবিদ ও লেখক। সেই লড়াকু নকশাল পন্থী নেতা আজিজুল হক, দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্য জনিত রোগে ভুগছিলেন, এমনকি কোনভাবে বাড়িতে পড়ে হাত ভেঙে গিয়েছিল সেই থেকেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সল্টলেকের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবশেষে একুশে জুলাই চির তোরে বিদায় নিলেন , যিনি কোনদিন রাজনৈতিক জীবনে কখনো মাথা নত করেননি। আজ সকলে এক যোদ্ধা কে হারালো,