০৭:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

শাহজাদপুরে এলজিইডির পৌনে ২ কোটি টাকার রাস্তা নির্মানে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

  • প্রকাশের সময় : ১০:৫৭:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
  • 27

মো: মোসলেম উদ্দিন সিরাজী ‎সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি

‎তারিখ : ১৪/০৭/২০২৫ ইং
‎সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে মাত্র ৭৫০ মিটার নির্মাণ কাজে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৬৯ লক্ষ ১২ হাজার ৮৪ টাকা। বিশাল এই বাজেটের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও শাহজাদপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, রাস্তা নির্মানে যে উচ্চতার মাটি ধরা হয়েছে তা দেড় ফিট কম রাখা হয়েছে, রাস্তার দুই পাশে মাটি দেওয়ার কথা থাকলেও কোন প্রকার মাটি দেওয়া হয়নি, যে খোয়া দেওয়া হয়েছে তা হাতের ডলায় ভেঙে যাচ্ছে এবং প্রাইমকোড করার সাথে সাথেই ধুয়ে গেছে বৃষ্টিতে। এছাড়াও কাজের বিপরীতে নির্ধারিত হারে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। স্থানীয় লোকজন কাজের অনিয়ম সম্পর্কে অবহিত করলেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে উল্টো ঠিকাদারদের পক্ষেই সাফাই গেয়ে থাকেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। জানা যায়, সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে “সিরাজগঞ্জ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের হরিরামপুর হতে পারমনোহাড়া পর্যন্ত প্রায় ৭৫০ মিটার রাস্তা নির্মাণের জন্য এলজিইডির ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১ কোটি ৬৯ লক্ষ ১২ হাজার ৮৪ টাকা বরাদ্ধ দেয়। যার চুক্তি মূল্য ১ কোটি ৬০ লক্ষ ৬৭ হাজার ৫৯ টাকা। রাস্তাটি নির্মানের কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস নুর এন্টার প্রাইজ। এক বছর আগে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও আওয়ামী সরকারের পতনের পর কাজ করতে ব্যার্থ হয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে সময় বাড়িয়ে নিয়ে মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস নুর এন্টার প্রাইজ কাজ বিক্রি করে দেয় রেজাউল করিম লিটন নামে এক ঠিকাদারের কাছে। ঠিকাদার রেজাউল করীম কাজ শুরু করলেও সম্পূর্ন স্বেচ্ছাচারী রূপে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে নির্মান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
‎সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করে সাব বেস ও ডব্লিউবিএম তৈরি করেছে। এতই নিম্মমানের যে খোয়াগুলো হাত দিয়েই ভাঙ্গা যায়। অল্প কিছু জায়গায় এত নিম্নমানের প্রাইম কোড করেছে যা বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে গেছে। রাস্তায় শোল্ডার না থাকায় এখনই জায়গাই জায়গাই ধ্বসে গেছে। ব্রিজের নি-ওয়াল ও উইং ওয়াল থেকে কাজ করার কথা থাকলেও তা না করে ব্রিজের মধ্যে থেকে প্রায় ৯০ ডিগ্রী বাক করে রাস্তার নির্মান করার ফলে সেখানে তৈরী হয়েছে একটি মরণ ফাঁদ। রাস্তার একপার্শ্বে এখই ফাটল ধরেছে। আর রাস্তাটি যে পরিমান উচ্চতার কথা ছিল তা না করে দেড় ফিট কম দিয়ে কাজ করছে উক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এব্যপারে স্থানীয় আব্দুল কাদের, বাহাদুর আলী, শাহাদৎ হোসেন, মমতাজ আলী, রফিকুল ইসলামসহ এলাকাবাসী জানান, রাস্তার দুই পাশে মাটিতো দেই নাই, উল্টো রাস্তার নিচে থেকে মাটি কেটে তা রাস্তায় ফেলেছে। এতে জায়গায় জায়গায় রাস্তা তৈরী হওয়ার আগেই দেবে গেছে। খোয়াগুলো পোড়া মাটির মত যা হাত দিয়েই ভাঙ্গা যায়। বারংবার অফিসের লোকদের বললেও তা তারা না শুনে উল্টো ঠিকাদারের পক্ষ নিয়ে কথা বলে।
‎এদিকে মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুর এন্টার প্রাইজ কাজ পেলেও তা বিক্রি করে দেয় রেজাউল করিম লিটন নামে এক ঠিকাদারের কাছে। এব্যপারে রেজাউল করিম লিটন জানান, ভাই একশ একশ কাজতো হয় না। কাজ তো এখনো শেষ হয় নাই, কাজ চলমান আছে। অপরদিকে উক্ত প্রকল্পের তদারকি কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী আলী আহমেদ আল মামুনের কাছে এ বিষয়ে জানতে গেলে তিনি বিরক্ত প্রকাশ করে বলেন, একাজের বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। আপনার সাথে কমিশন ভাগাভাগি করেই এ কাজ হচ্ছে এমন অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
‎এবিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী এ , এইচ,এম, কামরুল হাসান রনী বলেন, কাজ সঠিক ভাবে না করলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বিল প্রদান করা হবে না। কাজের চুক্তি মোতাবেক কাজ না হলে এবং কাজে অনিয়ম হলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, প্রতিটা তদারকি কর্মকর্তাকে সতর্ক করে দেওয়া হবে যেন ভবিষতে তাদের দ্বারা এধরনের ভুল না হয়।

জনপ্রিয়

কুমিল্লার বিশ্বরোডে যৌথ বাহিনীর চেকপোস্ট অভিযান

শাহজাদপুরে এলজিইডির পৌনে ২ কোটি টাকার রাস্তা নির্মানে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ১০:৫৭:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

মো: মোসলেম উদ্দিন সিরাজী ‎সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি

‎তারিখ : ১৪/০৭/২০২৫ ইং
‎সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে মাত্র ৭৫০ মিটার নির্মাণ কাজে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৬৯ লক্ষ ১২ হাজার ৮৪ টাকা। বিশাল এই বাজেটের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও শাহজাদপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, রাস্তা নির্মানে যে উচ্চতার মাটি ধরা হয়েছে তা দেড় ফিট কম রাখা হয়েছে, রাস্তার দুই পাশে মাটি দেওয়ার কথা থাকলেও কোন প্রকার মাটি দেওয়া হয়নি, যে খোয়া দেওয়া হয়েছে তা হাতের ডলায় ভেঙে যাচ্ছে এবং প্রাইমকোড করার সাথে সাথেই ধুয়ে গেছে বৃষ্টিতে। এছাড়াও কাজের বিপরীতে নির্ধারিত হারে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। স্থানীয় লোকজন কাজের অনিয়ম সম্পর্কে অবহিত করলেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে উল্টো ঠিকাদারদের পক্ষেই সাফাই গেয়ে থাকেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। জানা যায়, সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে “সিরাজগঞ্জ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের হরিরামপুর হতে পারমনোহাড়া পর্যন্ত প্রায় ৭৫০ মিটার রাস্তা নির্মাণের জন্য এলজিইডির ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১ কোটি ৬৯ লক্ষ ১২ হাজার ৮৪ টাকা বরাদ্ধ দেয়। যার চুক্তি মূল্য ১ কোটি ৬০ লক্ষ ৬৭ হাজার ৫৯ টাকা। রাস্তাটি নির্মানের কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস নুর এন্টার প্রাইজ। এক বছর আগে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও আওয়ামী সরকারের পতনের পর কাজ করতে ব্যার্থ হয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে সময় বাড়িয়ে নিয়ে মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস নুর এন্টার প্রাইজ কাজ বিক্রি করে দেয় রেজাউল করিম লিটন নামে এক ঠিকাদারের কাছে। ঠিকাদার রেজাউল করীম কাজ শুরু করলেও সম্পূর্ন স্বেচ্ছাচারী রূপে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে নির্মান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
‎সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করে সাব বেস ও ডব্লিউবিএম তৈরি করেছে। এতই নিম্মমানের যে খোয়াগুলো হাত দিয়েই ভাঙ্গা যায়। অল্প কিছু জায়গায় এত নিম্নমানের প্রাইম কোড করেছে যা বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে গেছে। রাস্তায় শোল্ডার না থাকায় এখনই জায়গাই জায়গাই ধ্বসে গেছে। ব্রিজের নি-ওয়াল ও উইং ওয়াল থেকে কাজ করার কথা থাকলেও তা না করে ব্রিজের মধ্যে থেকে প্রায় ৯০ ডিগ্রী বাক করে রাস্তার নির্মান করার ফলে সেখানে তৈরী হয়েছে একটি মরণ ফাঁদ। রাস্তার একপার্শ্বে এখই ফাটল ধরেছে। আর রাস্তাটি যে পরিমান উচ্চতার কথা ছিল তা না করে দেড় ফিট কম দিয়ে কাজ করছে উক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এব্যপারে স্থানীয় আব্দুল কাদের, বাহাদুর আলী, শাহাদৎ হোসেন, মমতাজ আলী, রফিকুল ইসলামসহ এলাকাবাসী জানান, রাস্তার দুই পাশে মাটিতো দেই নাই, উল্টো রাস্তার নিচে থেকে মাটি কেটে তা রাস্তায় ফেলেছে। এতে জায়গায় জায়গায় রাস্তা তৈরী হওয়ার আগেই দেবে গেছে। খোয়াগুলো পোড়া মাটির মত যা হাত দিয়েই ভাঙ্গা যায়। বারংবার অফিসের লোকদের বললেও তা তারা না শুনে উল্টো ঠিকাদারের পক্ষ নিয়ে কথা বলে।
‎এদিকে মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুর এন্টার প্রাইজ কাজ পেলেও তা বিক্রি করে দেয় রেজাউল করিম লিটন নামে এক ঠিকাদারের কাছে। এব্যপারে রেজাউল করিম লিটন জানান, ভাই একশ একশ কাজতো হয় না। কাজ তো এখনো শেষ হয় নাই, কাজ চলমান আছে। অপরদিকে উক্ত প্রকল্পের তদারকি কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী আলী আহমেদ আল মামুনের কাছে এ বিষয়ে জানতে গেলে তিনি বিরক্ত প্রকাশ করে বলেন, একাজের বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। আপনার সাথে কমিশন ভাগাভাগি করেই এ কাজ হচ্ছে এমন অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
‎এবিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী এ , এইচ,এম, কামরুল হাসান রনী বলেন, কাজ সঠিক ভাবে না করলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বিল প্রদান করা হবে না। কাজের চুক্তি মোতাবেক কাজ না হলে এবং কাজে অনিয়ম হলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, প্রতিটা তদারকি কর্মকর্তাকে সতর্ক করে দেওয়া হবে যেন ভবিষতে তাদের দ্বারা এধরনের ভুল না হয়।