১০:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

মানব কাটছে হাতির বন হাতি নিচ্ছে মানবপ্রাণ -কর্ণফুলী রেঞ্জে ২৬ বছরে হাতির আক্রমণে ১৯ মৃত্যু

  • প্রকাশের সময় : ০২:৪৪:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
  • 19

বিশেষ প্রতিনিধি:-
মানব কাটছে হাতির বন হাতি নিচ্ছে মানবপ্রাণ পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন কাপ্তাই-কর্ণফুলী রেঞ্জে হাতি আর মানুষ ‘দ্বন্দ্ব’ চলেই আসছে । হাতির আক্রমণে পঁচিশ বছরে কাপ্তাইয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৯ জন। দক্ষিণ বন বিভাগ কাপ্তাই -কর্ণফুলী রেঞ্জ কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের অন্তর্ভুক্ত এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চল বন্য হাতির নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ বছর যাবত কাপ্তাই বনাঞ্চল হতে হাতি লোকালয়ে এসে তাণ্ডব চালাচ্ছে। ফলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির মত ঘটনা ঘটছে। এতে করে হাতি মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হচ্ছে।হাতি খুবই শক্তিশালী এবং বিপজ্জনক হতে পারে, বিশেষ করে যখন তারা রেগে যায় বা বিরক্ত হয়। বন্য হাতিরা তাদের বিশাল আকার এবং শক্তির কারণে খুব সহজেই মানুষকে আহত করতে বা মেরে ফেলতে পারে।

 

এছাড়াও, “মত্ত হস্তী” (যে হাতিরা প্রজনন ঋতুতে উত্তেজিত থাকে) বিশেষ করে বিপজ্জনক হতে পারে।বনাঞ্চলে বিগত অনেক বছর ধরে নিরাপদে বিচরণ করে আসছে বন্যহাতি।বর্তমানে বনাঞ্চলে হাতির খাদ্য সংকট, চলাচলের করিডোর স্থানে অবকাঠামো, জনবসতি বৃদ্ধি ও বিবিধ পরিবেশগত কারণে বন্য হাতি প্রায় লোকালয়ে চলে আসে এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করে। কাপ্তাই রেঞ্জ অফিসারের তথ্য অনুযায়ী কাপ্তাই ও কর্ণফুলী রেঞ্জে ২০০০ সাল থেকে ২০২৫ সাল বিগত ২৬ বছরে বন্য হাতির আক্রমণে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ৬ জন পাগল ও ১৩ জন সাধারণ মানুষ। অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বনাঞ্চলে খাদ্য সংকটকালীন এবং ধান পাকার সময় পাহাড় ও বনাঞ্চল হতে হাতির দল লোকালয়ে প্রবেশের প্রবণতা দেখা যায়।

 

লোকালয়ের লোকজন তাদের ফসল রক্ষায় গুলি, বৈদ্যুতিক ফাঁদসহ বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে হাতি হত্যার ঘটনা ঘটিয়ে থাকে।ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে বন বিভাগ: দক্ষিণ রাঙ্গামাটি বন বিভাগ কাপ্তাইয়ের সহকারী বন সংরক্ষক মাসুম আলম জানান, বনাঞ্চলে হাতি মানুষ দ্বন্দ্ব হওয়ার একমাত্র কারণ হল হাতির খাদ্য সংকট, চলাচলে করিডোর স্থানে অবকাঠামো, জনবসতি বৃদ্ধি ও বিবিধ কারণে হাতি লোকালয়ে এসে তাণ্ডব চালানোর ফলে হাতি-মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। হাতিও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে বন বিভাগ ২০০২১-২২ অর্থবছরে কাপ্তাই রেঞ্জে ৮কি. মি. সোলার ফেন্সিলাইন স্থাপন করা হয়।

 

হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে কাপ্তাই ও কর্ণফুলী রেঞ্জের নিয়ন্ত্রনাধীন এলাকায় ৪টি এ্যালিফেন্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) গঠন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে হাতি বাংলাদেশ মহাবিপদাপন্ন প্রজাতির প্রাণী। বণ্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ মোতাবেক হাতি হত্যায় সর্বনিম্ন ২ বছর এবং সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা হতে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া হাতি ও মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে সরকার বন্যপ্রাণী দ্বারা আক্রান্ত জানমালের ক্ষতিপূরণ বিধিমালা ২০০২১ প্রণয়ন করেন।

 

বিধিমালা অনুযায়ী বন্যহাতি দ্বারা লোকালয়ে কোন ব্যক্তির মৃত্যু হলে সরকারের পক্ষ হতে ৩ লাখ, আহত হলে ১ লাখ ও সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের বিধান রয়েছে। জনসাধারণের নিরাপত্তা ও সচেতনতায় বন বিভাগ কি কি করছে ?কাপ্তাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক স্বাধীন জানান, হাতিও মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে ইআরটি টিম গঠন, ৮কি. মি. সোলার ফেন্সি স্থাপন, কর্ণফুলী রেঞ্জের বিউবো এলাকায় আরো ৪ কি. মি. সোলার ফেন্সি স্থাপন পরিকল্পনা, হাতি সংরক্ষণে মাইকিং করে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা, সচেতনতামূলক সভা ও পশু খাদ্য বাগান সৃষ্টিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

জনপ্রিয়

অমর একুশে জুলাই -শহীদ স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানালেন, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

মানব কাটছে হাতির বন হাতি নিচ্ছে মানবপ্রাণ -কর্ণফুলী রেঞ্জে ২৬ বছরে হাতির আক্রমণে ১৯ মৃত্যু

প্রকাশের সময় : ০২:৪৪:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

বিশেষ প্রতিনিধি:-
মানব কাটছে হাতির বন হাতি নিচ্ছে মানবপ্রাণ পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন কাপ্তাই-কর্ণফুলী রেঞ্জে হাতি আর মানুষ ‘দ্বন্দ্ব’ চলেই আসছে । হাতির আক্রমণে পঁচিশ বছরে কাপ্তাইয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৯ জন। দক্ষিণ বন বিভাগ কাপ্তাই -কর্ণফুলী রেঞ্জ কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের অন্তর্ভুক্ত এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চল বন্য হাতির নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ বছর যাবত কাপ্তাই বনাঞ্চল হতে হাতি লোকালয়ে এসে তাণ্ডব চালাচ্ছে। ফলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির মত ঘটনা ঘটছে। এতে করে হাতি মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হচ্ছে।হাতি খুবই শক্তিশালী এবং বিপজ্জনক হতে পারে, বিশেষ করে যখন তারা রেগে যায় বা বিরক্ত হয়। বন্য হাতিরা তাদের বিশাল আকার এবং শক্তির কারণে খুব সহজেই মানুষকে আহত করতে বা মেরে ফেলতে পারে।

 

এছাড়াও, “মত্ত হস্তী” (যে হাতিরা প্রজনন ঋতুতে উত্তেজিত থাকে) বিশেষ করে বিপজ্জনক হতে পারে।বনাঞ্চলে বিগত অনেক বছর ধরে নিরাপদে বিচরণ করে আসছে বন্যহাতি।বর্তমানে বনাঞ্চলে হাতির খাদ্য সংকট, চলাচলের করিডোর স্থানে অবকাঠামো, জনবসতি বৃদ্ধি ও বিবিধ পরিবেশগত কারণে বন্য হাতি প্রায় লোকালয়ে চলে আসে এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করে। কাপ্তাই রেঞ্জ অফিসারের তথ্য অনুযায়ী কাপ্তাই ও কর্ণফুলী রেঞ্জে ২০০০ সাল থেকে ২০২৫ সাল বিগত ২৬ বছরে বন্য হাতির আক্রমণে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ৬ জন পাগল ও ১৩ জন সাধারণ মানুষ। অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বনাঞ্চলে খাদ্য সংকটকালীন এবং ধান পাকার সময় পাহাড় ও বনাঞ্চল হতে হাতির দল লোকালয়ে প্রবেশের প্রবণতা দেখা যায়।

 

লোকালয়ের লোকজন তাদের ফসল রক্ষায় গুলি, বৈদ্যুতিক ফাঁদসহ বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে হাতি হত্যার ঘটনা ঘটিয়ে থাকে।ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে বন বিভাগ: দক্ষিণ রাঙ্গামাটি বন বিভাগ কাপ্তাইয়ের সহকারী বন সংরক্ষক মাসুম আলম জানান, বনাঞ্চলে হাতি মানুষ দ্বন্দ্ব হওয়ার একমাত্র কারণ হল হাতির খাদ্য সংকট, চলাচলে করিডোর স্থানে অবকাঠামো, জনবসতি বৃদ্ধি ও বিবিধ কারণে হাতি লোকালয়ে এসে তাণ্ডব চালানোর ফলে হাতি-মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। হাতিও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে বন বিভাগ ২০০২১-২২ অর্থবছরে কাপ্তাই রেঞ্জে ৮কি. মি. সোলার ফেন্সিলাইন স্থাপন করা হয়।

 

হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে কাপ্তাই ও কর্ণফুলী রেঞ্জের নিয়ন্ত্রনাধীন এলাকায় ৪টি এ্যালিফেন্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) গঠন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে হাতি বাংলাদেশ মহাবিপদাপন্ন প্রজাতির প্রাণী। বণ্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ মোতাবেক হাতি হত্যায় সর্বনিম্ন ২ বছর এবং সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা হতে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া হাতি ও মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে সরকার বন্যপ্রাণী দ্বারা আক্রান্ত জানমালের ক্ষতিপূরণ বিধিমালা ২০০২১ প্রণয়ন করেন।

 

বিধিমালা অনুযায়ী বন্যহাতি দ্বারা লোকালয়ে কোন ব্যক্তির মৃত্যু হলে সরকারের পক্ষ হতে ৩ লাখ, আহত হলে ১ লাখ ও সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের বিধান রয়েছে। জনসাধারণের নিরাপত্তা ও সচেতনতায় বন বিভাগ কি কি করছে ?কাপ্তাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক স্বাধীন জানান, হাতিও মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে ইআরটি টিম গঠন, ৮কি. মি. সোলার ফেন্সি স্থাপন, কর্ণফুলী রেঞ্জের বিউবো এলাকায় আরো ৪ কি. মি. সোলার ফেন্সি স্থাপন পরিকল্পনা, হাতি সংরক্ষণে মাইকিং করে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা, সচেতনতামূলক সভা ও পশু খাদ্য বাগান সৃষ্টিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।