
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির
সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ এই প্রবাদটির মর্মার্থ অনেক গভীর ও বাস্তবধর্মী। কারণ মানুষ তার বন্ধুবান্ধব বা চারপাশের মানুষ দ্বারা প্রভাবিত হয়। এ জন্যই মহানবী সা. বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে খুব বেশি সতর্কতা অবলম্বনের তাগিদ দিতেন।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর রীতি-নীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮৩৩)। অর্থাৎ বন্ধুরা মানুষের ভালো অভ্যাস বা মন্দ অভ্যাসে অভ্যন্ত হওয়ার ব্যাপারে প্রভাব বিস্তার করে।
সাধারণভাবে চিন্তা করলেও দেখা যায়, বন্ধুরা বা কাছের মানুষরা অবচেতনভাবেই মানুষের অভ্যাসকে প্রভাবিত করে, যার ফলে মানুষের স্বাস্থ্য, আর্থিক এবং জীবনযাত্রার পছন্দগুলোতে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় পরিবর্তন আসে।
এই অবচেতন প্রভাবকে সহজ বাংলায় সঙ্গদয় বলা যেতে পারে, যার প্রভাবে আমরা নিজের অজান্তেই আমাদের চারপাশের লোকদের কাছ থেকে আচরণগত দিকগুলো গ্রহণ করি। ইতিবাচক সম্পর্কগুলো স্বাস্থ্যকর আচরণ ও পেশাদার বিকাশকে অনুপ্রাণিত করতে পারে, তবে নেতিবাচক সম্পর্কগুলো মানুষকে ক্ষতিকর অভ্যাস গ্রহণের দিকে পরিচালিত করতে পারে। তাই আমাদের ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য এমন বন্ধু নির্বাচনের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত যাদের মূল্যবোধ এবং আকাক্ষা আমাদের ইহ ও পরকালীন মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এ জন্য মহানবী সা. বলেছেন, সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উপমা হলো কস্তুরী বহনকারী (আতর বিক্রেতা) ও কামারের হাতরের মতো।
মৃগ কর্তৃরী বহনকারী হয়তো তোমাকে কিছু দান করবে কিংবা তার কাছ থেকে তুমি কিছু খরিদ করবে কিংবা তার কাছ থেকে তুমি লাভ করবে সুবাস। আর কামারের হাতর হয়তো তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে কিংবা তুমি তার কাছ থেকে পাবে দুর্গন্ধ। (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮২৯)।
তাই মানুষের উচিত বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমন লোকদের প্রাধান্য দেয়া, যারা দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতায় সহযোগী বা সহযোদ্ধা হয়। তাহলে সেই বন্ধুত্ব জান্নাত পর্যন্ত স্থায়ী হবে, ইনশাআল্লাহ। পাশাপাশি সেই বন্ধুত্বের ওপর আল্লাহর রহমতও থাকবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আর ঈমানদার পুরুষ এবং ঈমানদার একে অপরের বন্ধু। তারা ভালো কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠিত করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। তাদের ওপর আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী সুকৌশলী।’ (সূরা আত তওবা, আয়াত: ৭১)।
আর যদি বন্ধুত্ব হয় নিছক দুনিয়াবি স্বার্থে, তবে তা মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে দুর্ভোগ বৈ ভালো কিছু বয়ে আনার সম্ভাবনা নেই; বরং মানুষ পরকালে অসৎ বন্ধুত্বের জন্য আফসোস করবে, যে বন্ধুত্ব মানুষকে আল্লাহর বিধি-বিধান ভুলিয়ে পাপের পথে পরিচালিত করেছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হায় আমার দুর্ভোগ, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। অবশ্যই সে তো আমাকে উপদেশবাণী থেকে বিভ্রান্ত করেছিল, আমার কাছে তা আসার পর। আর শয়তান তো মানুষের জন্য চরম প্রতারক।’ (সূরা ফুরকান, আয়াত: ২৮-২৯)।
দুনিয়ার জীবনে আমাদের চলার পথে আশেপাশের মানুষদের সাথে চলতে হবে, বন্ধুত্ব হবে। কারণ, মানুষ মানুষ ছাড়া চলতে পারে না। এটাই স্বাভাবিক বিষয়। তবে, সাবধান আমরা যেন পরিছন্ন, ভালো ও সৎ ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে নির্বাচিত করি। তাহলে, দুনিয়া ও আখেরাতের জীবন হবে সুন্দর ও শান্তিময়।
লেখক:গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ধর্ম ও সমাজ বিশ্লেষক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপস্থাপক ও চেয়ারম্যান, গাউছিয়া ইসলামিক মিশন, কুমিল্লা।০১৭১৮২২৮৪৪৬



























