১০:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

বুড়িচংয়ে কলেজ ছাত্র তুহিন হত্যাকাণ্ডে চাঞ্চল্য ৫ দিনেও আসামি গ্রেপ্তার হয়নি ওসি আজিজুলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

  • প্রকাশের সময় : ০৬:২০:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
  • 72

মোঃ শাহজাহান বাশার ,সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার এরশাদ ডিগ্রি কলেজের মেধাবী ছাত্র তুহিনকে অপহরণের পর নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনাটি এখন পুরো উপজেলাজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
টানা পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় সে।

তুহিনের বাড়ি উপজেলার কালিকাপুর এলাকায়। স্থানীয়ভাবে তিনি পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ও ভদ্র স্বভাবের ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

গত ২৩ অক্টোবর বিকেলে কলেজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে একদল দুর্বৃত্ত পূর্বপরিকল্পিতভাবে তুহিনকে অপহরণ করে। পরে তাকে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়।
স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তুহিনকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরদিন ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ তার মৃত্যু হয়।

তুহিনের মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া, আর ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের সুর।

তুহিনের মা ঘটনাটির পরপরই বুড়িচং থানায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে—মামলা দায়েরের পাঁচ দিন পার হলেও পুলিশ এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
স্থানীয়দের প্রশ্ন—“পুলিশ কেন এমন নিষ্ক্রিয়? এরা কি আসামীদের রক্ষা করছে?”

পরিবারের অভিযোগ, মামলার আসামিদের সঙ্গে থানার ওসি মোহাম্মদ আজিজুল হকের অঘোষিত যোগাযোগ রয়েছে। তাদের দাবি—এই ‘অঘোষিত সমঝোতার’ কারণেই মামলার অগ্রগতি হচ্ছে না।

একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন,“আমরা দেখছি, ওসি সাহেব মামলার বিষয়ে একেবারেই উদাসীন। এতটা নীরব থাকা কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়। মনে হচ্ছে কোনো চাপ বা স্বার্থের কারণে তিনি চুপ আছেন।”

ওসি’র আচরণ ও বিতর্কিত ভূমিকা -এই বিষয়ে জানতে বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আজিজুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তেমন সৎ বা স্পষ্ট কোনো উত্তর দেননি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আরেকটা কল আসছে”—বলে ফোন কেটে দেন।

এতে স্থানীয় সাংবাদিক ও সচেতন মহলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই মনে করছেন, ওসি আজিজুল হক ইচ্ছাকৃতভাবে এই মামলাকে ধীরগতিতে পরিচালনা করছেন যাতে আসামিরা পালানোর সুযোগ পায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওসি আজিজুল হকের বিরুদ্ধে আগেও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাসিক ‘মাশওয়ারা’ নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে এলাকাজুড়ে গুঞ্জন রয়েছে।অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—“যিনি নিজেই অভিযোগের ঘেরাটোপে, তিনি কীভাবে একজন নিরপরাধ শিক্ষার্থীর হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করবেন?”

জনমনে ক্ষোভ ও প্রশাসনের নীরবতা -ঘটনাটি নিয়ে বুড়িচংয়ের সর্বস্তরের জনগণ উত্তাল। এলাকাবাসী তুহিন হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
তাদের দাবি—ওসি আজিজুল হককে অবিলম্বে প্রত্যাহার করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করতে হবে।

তুহিনের এক আত্মীয় বলেন,“আমরা পুলিশের কাছে ন্যায়বিচার চেয়েছি, কিন্তু তারা নীরব। এখন আমরা চাই, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপার সরাসরি হস্তক্ষেপ করুন।”

উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ -এই বিষয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. নাজির আহমেদ খান-এর কাছে জানতে চাওয়া হবে—

কেন তাঁর অধীনে কর্মরত ওসি আজিজুল হকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?
কেন তুহিন হত্যাকাণ্ডের মতো সংবেদনশীল মামলায় এত অবহেলা প্রদর্শন করা হচ্ছে?

এ ধরনের ঘটনার পর যখন পুলিশ প্রশাসনের ভেতরেই প্রশ্নের জন্ম হয়, তখন জনগণের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তুহিন হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য উদঘাটন ও দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হলে এখনই পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
অন্যথায়, বুড়িচংয়ের এই হত্যাকাণ্ডও হারিয়ে যাবে অন্ধকার প্রশাসনিক গলিপথে।

জনপ্রিয়

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে পদ্মা তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যুতে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখবে মির্জা ফখরুল

বুড়িচংয়ে কলেজ ছাত্র তুহিন হত্যাকাণ্ডে চাঞ্চল্য ৫ দিনেও আসামি গ্রেপ্তার হয়নি ওসি আজিজুলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

প্রকাশের সময় : ০৬:২০:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

মোঃ শাহজাহান বাশার ,সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার এরশাদ ডিগ্রি কলেজের মেধাবী ছাত্র তুহিনকে অপহরণের পর নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনাটি এখন পুরো উপজেলাজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
টানা পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় সে।

তুহিনের বাড়ি উপজেলার কালিকাপুর এলাকায়। স্থানীয়ভাবে তিনি পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ও ভদ্র স্বভাবের ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

গত ২৩ অক্টোবর বিকেলে কলেজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে একদল দুর্বৃত্ত পূর্বপরিকল্পিতভাবে তুহিনকে অপহরণ করে। পরে তাকে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়।
স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তুহিনকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরদিন ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ তার মৃত্যু হয়।

তুহিনের মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া, আর ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের সুর।

তুহিনের মা ঘটনাটির পরপরই বুড়িচং থানায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে—মামলা দায়েরের পাঁচ দিন পার হলেও পুলিশ এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
স্থানীয়দের প্রশ্ন—“পুলিশ কেন এমন নিষ্ক্রিয়? এরা কি আসামীদের রক্ষা করছে?”

পরিবারের অভিযোগ, মামলার আসামিদের সঙ্গে থানার ওসি মোহাম্মদ আজিজুল হকের অঘোষিত যোগাযোগ রয়েছে। তাদের দাবি—এই ‘অঘোষিত সমঝোতার’ কারণেই মামলার অগ্রগতি হচ্ছে না।

একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন,“আমরা দেখছি, ওসি সাহেব মামলার বিষয়ে একেবারেই উদাসীন। এতটা নীরব থাকা কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়। মনে হচ্ছে কোনো চাপ বা স্বার্থের কারণে তিনি চুপ আছেন।”

ওসি’র আচরণ ও বিতর্কিত ভূমিকা -এই বিষয়ে জানতে বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আজিজুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তেমন সৎ বা স্পষ্ট কোনো উত্তর দেননি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আরেকটা কল আসছে”—বলে ফোন কেটে দেন।

এতে স্থানীয় সাংবাদিক ও সচেতন মহলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই মনে করছেন, ওসি আজিজুল হক ইচ্ছাকৃতভাবে এই মামলাকে ধীরগতিতে পরিচালনা করছেন যাতে আসামিরা পালানোর সুযোগ পায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওসি আজিজুল হকের বিরুদ্ধে আগেও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাসিক ‘মাশওয়ারা’ নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে এলাকাজুড়ে গুঞ্জন রয়েছে।অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—“যিনি নিজেই অভিযোগের ঘেরাটোপে, তিনি কীভাবে একজন নিরপরাধ শিক্ষার্থীর হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করবেন?”

জনমনে ক্ষোভ ও প্রশাসনের নীরবতা -ঘটনাটি নিয়ে বুড়িচংয়ের সর্বস্তরের জনগণ উত্তাল। এলাকাবাসী তুহিন হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
তাদের দাবি—ওসি আজিজুল হককে অবিলম্বে প্রত্যাহার করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করতে হবে।

তুহিনের এক আত্মীয় বলেন,“আমরা পুলিশের কাছে ন্যায়বিচার চেয়েছি, কিন্তু তারা নীরব। এখন আমরা চাই, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপার সরাসরি হস্তক্ষেপ করুন।”

উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ -এই বিষয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. নাজির আহমেদ খান-এর কাছে জানতে চাওয়া হবে—

কেন তাঁর অধীনে কর্মরত ওসি আজিজুল হকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?
কেন তুহিন হত্যাকাণ্ডের মতো সংবেদনশীল মামলায় এত অবহেলা প্রদর্শন করা হচ্ছে?

এ ধরনের ঘটনার পর যখন পুলিশ প্রশাসনের ভেতরেই প্রশ্নের জন্ম হয়, তখন জনগণের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তুহিন হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য উদঘাটন ও দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হলে এখনই পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
অন্যথায়, বুড়িচংয়ের এই হত্যাকাণ্ডও হারিয়ে যাবে অন্ধকার প্রশাসনিক গলিপথে।