
নিয়মিত মাসিক সভা, সার্কেল-ভিত্তিক নির্দেশনা ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে দেয়া সচেতনতামূলক বার্তাগুলো হয়েছে, কিন্তু মাঠ পর্যায়ে কোনো দৃঢ় ও প্রতীয়মান দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়নি — ফলে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অপরাধীরাজ জাতীয় কার্যকলাপ অব্যাহত রয়েছে এবং সাধারণ মানুষ ও গণমাধ্যমের আস্থাহীনতা বাড়ছে।
নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আমরা স্পষ্টভাবে তুলে ধরছি — এবং দ্রুত, দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানাই:
১) বারবার সতর্কবার্তা এবং নির্দেশনা দিলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নেই
অফিসিয়াল সভা ও হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় নীতিগত তাগিদ থাকলেও, অনিয়মের ক্ষেত্রে শুধু বদলি-কর্মর্কম দেখা যায়; কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা কিংবা শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
প্রতিকারের অভাব অপরাধ সংগঠকদের সাহস বাড়ায় — পুলিশকর্মী ও মাদক ব্যবসায়ীর অপ্রাকৃতিক মিলবন্ধন অব্যাহত থাকে।
২) বদলিকে শাস্তি হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে — যা পর্যাপ্ত নয়
বদলি নিঃসন্দেহে প্রশাসনিক ব্যবস্থা; কিন্ত যদি কোনো অফিসারের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অপরাধ প্রমাণিত হয়, তবে শুধু বদলি নয়—বিভাগীয় তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা (বহিষ্কার, সার্বিক জরিমানা, নৈর্ব্যক্তিক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ ইত্যাদি) জরুরি।
দৃষ্টান্ত স্থাপন না করলে একই ধরনের অনিয়ম বারবার হবে।
৩) সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগে অনীহা — স্বচ্ছতা-হীনতা বাড়াচ্ছে
ঘোর অভিযোগ: সাংবাদিকরা যখন কোনো খবর-তথ্য জিজ্ঞাসা করেন, সার্কেল/ওসি/এসআই/এএসআই পর্যায়ের অনেকেই ফোন রিসিভ করেন না বা যোগাযোগ এড়িয়ে যান।
যদি অফিসাররা অপরাধে অপরাধী না হন, তাহলে সাংবাদিকদের সাথে মুক্ত ও আন্তরিকভাবে কথা বলার কি কোনো আপত্তি আছে? জনগণের কণ্ঠস্বর প্রকাশে সাংবাদিকদের প্রতিবন্ধকতা দেওয়ার কোন বন্ধুপ্রতিম কারণ ভাবা যায় না।
৪) মনোনিবেশকৃত অনুরোধ ও প্রস্তাবনা — আমাদের দাবি
আমরা শ্রদ্ধার সাথে দাবি করছি যে কুমিল্লা জেলার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি রোধে আপনার অফিস নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন:
ক) দৃঢ় ও স্বচ্ছ বিভাগীয় ব্যবস্থা চালু করুন — অপরাধী কর্মকর্তা/কনস্টেবলদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালিয়ে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত (অস্থায়ী বহিষ্কার, স্থায়ী বরখাস্ত, গ্রাহ্য মামলা রেজিস্ট্রেশন) গ্রহণ করুন; শুধুমাত্র বদলি-এ সীমাবদ্ধ না রেখে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন।
খ) মাদক অভিযানের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র মনিটরিং টিম গঠন করুন — বিশেষত সেই থানা/সার্কেল যেখানে পুনরাবৃত্ত অভিযোগ আছে; তৎপরতার রিপোর্ট মাসিক প্রকাশ করুন।
গ) সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ নীতিমালা প্রণয়ন করুন — জরুরি সংবাদ/অভিযোগে দ্রুত সাড়া দিতে অফিসিয়াল যোগাযোগ নির্দেশনা জারি করুন; সার্কেল স্তরে মিডিয়া লিঙ্ক অফিসার নিয়োগ রাখুন।
ঘ) হোয়াটসঅ্যাপ/অনলাইন নির্দেশনার পাশাপাশি মাঠে কার্যকরী পর্যবেক্ষণ ও ফলপ্রসূ তদন্ত চালু করুন — প্রশমনমূলক নির্দেশনা যথাযথ ফল দিতে হলে মাঠ পর্যায়ে মাননীয় পর্যবেক্ষক থাকা আবশ্যক।
ঙ) দুর্নীতি প্রতিরোধে স্বচ্ছতার জন্য একটি হটলাইন/ই-মেইল/পাবলিক রিমিডিয়েশন সিস্টেম চালু করুন যেখানে নাগরিকরা স্বতন্ত্রভাবে অভিযোগ করতে পারবেন এবং অভিযোগের প্রগতি তিনি জানতে পারবেন।
চ) অভিযোগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/কনস্টেবলদের দায়িত্ব বরখাস্তের প্রক্রিয়া দ্রুততর করুন এবং তদন্ত চলাকালীন তারা সাধারণ জনসেবার দায়িত্ব থেকে অপসারণ থাকুন।
ছ) সংশ্লিষ্ট থানার কর্মসম্পাদন মূল্যায়ন (KPIs) প্রণয়ন ও প্রকাশ করুন — যাতে জনগণ সহজেই জন-প্রতিবেদন দেখে থানার ফলাফল বিচার করতে পারে।
৫) আমাদের প্রত্যাশা ও শেষ কথা
আমরা কুমিল্লা পুলিশ সুপার হিসেবে আপনার কাছ থেকে দৃঢ় কর্তৃত্ব, ন্যায়পরায়ণ সিদ্ধান্ত ও স্বচ্ছতাপূর্ণ পদক্ষেপ প্রত্যাশা করি।
শুধুমাত্র নির্দেশনা নয়; বাস্তব ও তাত্পর্যপূর্ণ পদক্ষেপ (দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, স্বচ্ছ তদন্ত রিপোর্ট, সাংবাদিকদের সাথে সহনীয় ও দ্রুত যোগাযোগ) গ্রহণ করলেই পুলিশ বাহিনীর আভ্যন্তরীণ সংস্কৃতি বদলাতে পারবে এবং মাদক-অপরাধী মিথস্ক্রিয়ার জয়জয়কার বন্ধ হবে।
সাংবাদিকরা ও নাগরিকরা আপনার নেতৃত্বকে সম্মান করবে যদি আপনি দৃশ্যমান ও সচ্ছ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেন — আমরা বিশ্বাস করি আপনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
আমরা আশা করবো যে আপনি এই প্রতিবেদনটি গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন; এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সাংবাদিক সমাজকে নিয়মিতভাবে আপডেট দেবেন। জনস্বার্থে ত্বরিত, দৃশ্যমান ও ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবারও উল্লেখ করছি — বদলি নয়, দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা চাই





















