বিশেষ প্রতিবেদক লক্ষ্মীপুর
গত ৭ আগস্ট (২০২৫) বাংলাদেশ সময় আনুমানিক ০৫টার দিকে সৌদি আরবে ডিউটিরত অবস্থায় এক্সিডেন্টে নিহত হন লক্ষীপুরের সেরাজুল বেপারি।
অর্থের অভাবে দেশে লাশ আনতে পারছিল না তার পরিবারের সদস্যরা। এই ফলে হতাশায় পড়ে যায় পরিবারের সদস্য। এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের লক্ষীপুর জেলা শাখার সদস্য সচিব এবং দৈনিক সংবাদ দিগন্তের স্টাফ রিপোর্টার মেহেদী হাসান রাসেল কর্তৃক গত ৯ আগস্ট ২০২৫ ইং তারিখে দৈনিক সংবাদ দিগন্ত পত্রিকায় এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।
সৌদি আরবে দুর্ঘটনায় নিহত লক্ষীপুরের সেরাজুলের লাশ অর্থের অভাবে দেশে আনতে পরিবারের অপারগতার বিষয়টি নিয়ে 'আরপি নিউজ' সহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও দৈনিক জনতায়ও এ নিউজটি প্রকাশিত হয়। এরই পরিপেক্ষিতে এলাকায় সর্বস্থরের জনগণ বিষয়টি নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ফলে রায়পুরের সৌদি প্রবাসী ও দেশের মানুষের অর্থ সহায়তায় লাশ দেশে এনে নিজ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা সম্ভব হয়।
লক্ষীপুর রায়পুরে ২ নং উত্তর চরবংশী, ইউনিয়নের, উত্তর চরবংশী, মুলা বেপারি বাড়ি নিবাসী (মৃত সেকান্তর বেপারি ছোট ছেলে সেরাজুল বেপারী (৩৫) গত ৭ আগস্ট সৌদি আরবে ডিউটিরত অবস্থা এক্সিডেন্টে মৃত্যুবরন করেন। তার লাশ সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ মনুসিয়া রিমন মেডিকেল মর্গে রাখা হয়। লাশ আনতে অত্র এলাকার সরফাত উল্যা কবিরাজ বাড়ী মানব কল্যান সামাজিক সংস্থার সৌদি প্রবাসীরা ৫১,২০০ টাকা ক্ষুদ্র অনুদান প্রদান করেন। ও অত্র এলাকার আস-সবুর ফাউন্ডেশনের সহায়তায় মোট ৩ লাখ ৬ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা পান।
অত্র টাকা দিয়ে অদ্য শনিবার (২৩ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টায় সফি উল্যা সর্দারের স্টেশনের জামে মসজিদে তার জানাজা সম্পন্না করে নিজ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেন।
মৃত সেরাজুল বেপারীর মা বলেন, এই শোক আমি সইবো কিভাবে। আমিতো আমার ছেলেকে আর ফিরে পাবো না। আল্লাহ আমাকে নিয়ে আমার ছেলেকে রেখে দিতো, তাহলে তো আমার নাতনীরা এতিম হতো না। তিনি আরো বলেন, মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের লক্ষীপুর জেলা শাখার সদস্য সচিব এবং দৈনিক সংবাদ দিগন্তের স্টাফ রিপোর্টার মেহেদী হাসান রাসেল সহ এহসানুল আসিফ মাসুমকে জানাই। উনারা এ বিষয়টি বিভিন্ন পত্রিকা সহ বিভিন্ন অনলাইনে নিউজ করেন, এতে করে আমার ছেলেকে বিদেশ থেকে আনার জন্য অনেকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। তাদের আর্থিক সহায়তা করার কারনে আমার ছেলের লাশ দেশে আনা সম্ভব হয়, এদের ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবো না। তাদের সকলের জন্য আমি সারাক্ষণ দোয়া করি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সংসার চলতো আমার ছেলে বিদেশ থেকে টাকা পাঠালে। আজ তো আমার ছেলে নেই, কে আমার ছোট ছোট দুইটি নাতিনের খরচ চালাবে, কিভাবে চলবে তাদের ভবিষ্যৎ জীবন।
নিহত সেরাজুলের স্ত্রী বলেন, আমার বিয়ের পর থেকেই সংসার চালাতে আমার স্বামীর হিমশিম খেতে হতো। এখন তো তিনি নেই, আমার এই ছোট দুইটি মেয়ের কি হবে, কিভাবে আমরা এই শোক সইব এবং কিভাবে আমার সংসার চালাবো বুজে উঠতে পারছি না, যাদের প্রচেষ্টায় আমার স্বামীকে শেষ বিদায়ের বেলায় এক নজর দেখতে পেলাম আল্লাহ যেন তাদের মঙ্গল করুন এই দোয়া করি।
এলাকাবাসীও জানায় সিরাজুল গেছে পরিবারের হাল দরতে কিন্তু ফিরলো লাশ হয়ে। ছোট ছোট দুই মেয়ের কি হবে। কিভাবে তাদের সংসার চলবে। সরকার যদি পাশে দাঁড়াতো, তাহলে পরিবারটির উপকার হতো।
এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের লক্ষীপুর জেলা শাখার সদস্য সচিব এবং দৈনিক সংবাদ দিগন্তের স্টাফ রিপোর্টার মেহেদী হাসান রাসেল বলেন, আমি এহসানুল আসিফ মাসুমের কাছ থেকে মৃত্যুর খবর পেয়ে খুবই মর্মাহত হলাম, তখন এই বিষয়টি নিয়ে একটা নিউজ করলাম এবং বিভিন্ন অনলাইনে তা প্রকাশের জন্য পাঠালাম। এই অসহায় পরিবারের অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে অনেকে এগিয়ে এসেছেন, তার ই পরিপেক্ষিতে আজ সিরাজুলের লাশ দেশে এসেছে। মা তার ছেলেকে শেষ দেখা দেখলো, বিধবা স্ত্রী দেখলো তার স্বামীকে, এতিম হওয়া দুটি বাচ্চা দেখলো তাদের বাবাকে আর এলাকাবাসী দেখলো তাদের সিরাজুলকে।
তিনি আরো বলেন, যেভাবে সেরাজুলের লাশ আনতে সবাই সাহায্য করেছে, ঠিক তেমনি যদি এখন এই অসহায় পরিবারের অসহায়ত্বের কথা চিন্তা করে সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে এই পরিবারটি সমাজে টিকে থাকতে পারবে।
প্রবীন সাংবাদিক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের লক্ষীপুর জেলা শাখার সভাপতি ও দৈনিক জনতার স্টাফ রিপোর্টার বি.বি.রায় চৌধুরী বলেন, সাংবাদিক মেহেদী হাসান রাসেল, এহসানুল আসিফ মাসুম বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিউজ করার কারনে এলাকায় জনগণ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তারই ফলশ্রুতিতে আজ একটা পরিবার তাদের সিরাজুলকে নিজের চোখে দেখে শেষ বিদায় দেন। যাদের সহযোগিতায় সিরাজুলের মৃত দেহ বাংলাদেশে পরিবারের কাছে এসেছ, প্রত্যেককে তিনি ধন্যবাদ জানান এবং অসহায় পরিবারের পাশে দাড়াতে সকলকে আহ্বান জানান।
রায়পুর উপজেলা সার্ভেয়ার আমিন সমিতির সাবেক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সচিব, ও লক্ষীপুর সাংবাদিক কল্যান সংস্থার সদস্য এহসানুল আসিফ মাসুম বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশির এমন মৃত্যু কখনো কেউ কামনা করে না। বাংলাদেশ সরকারের কাছে আকুল আবেদন নিরীহ অসহায় মৃত সেরাজুলের ছোট দুইটি কন্যা সন্তান এর পড়ালেখা ও ভরণপোষণের জন্য আর্থিক সহায়তা করলে অত্র শোকাহত অসহায় পরিবারটি চির কৃতজ্ঞ থাকবে।
বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: চেয়ারম্যান : গোলাম কিবরিয়া, ব্যবস্থাপনাপরিচালক : ফয়সাল শিকদার, বার্তা সম্পাদক : ইয়াছমিন আক্তার, ঠিকানা : চৌধুরী সুপার মার্কেট, এস এ গনি রোড, বারেশ্বর চৌমুনি, বুড়িচং, কুমিল্লা।
মোবাইল : +৮৮ ০১৮০৬৬০৮৫৩৩, +৮৮ ০১৯৪৮৭২৭৫৬১ , +৮৮ ০১৬৪১৬৯০৮১৬
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত